প্রিয় ‘আলম’,

ভালোবাসা জানিস। আশাকরি ভালো আছিস।আজো আমলকীর ঐ ডালে ডালে আলোর নাচন হয়। কিন্তু অনেক কাল আর চিঠি লেখা হয় না।সময় বড্ড কঠিন হয়ে গেছেরে। চারদিক যান্ত্রিক।আন্ত্রিকে বিভোর সব৷অন্তরওয়ালা মানুষগুলো এখন ইট কাঠ- পরিপাট। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা বড্ড ক্ষয়িষ্ণু। সহিষ্ণুরা দিশেহারা ঘরছাড়া।

তবুও কেমন আছিসরে সাধু? কবিতা লিখিস?এখনো কি সেই সুধাময়ের বিভোরে আছিস?

সুধার কথা কি মনে পড়ে? যার জন্য তুই সাধু হয়েছিলি! আমারতো আর সুধা ছিলো না!আমি বরাবর আগাগোড়া আটপৌরে সাদাসিদা। কখনো তাই সিঁধ কাটতে পারিনি!

এখানে বড্ড শীতরে।শরীরে কাঁপন ধরায়।এখন আর অন্য কিছুতে কম্পনতা হয় না।বুঝিরে বয়স আর সরস নেইরে।বিকেলের ছায়া এখন আড়ষ্টতার মায়াতে আবদ্ধ। বড্ড ক্লান্তরে।জীবনের অনেকখানি পাড়ি দিলামতো!জীবনের ঐ পাড় এখন ধুসর। এই পাড় দেখা যায়- কালো আর আলোর মিশেলে ঐন্দ্রজালিক।

তোর চোখের পাওয়ার এখন কতো?আমার জুলফির সাদা চুল চশমার পাওয়ারকে আচমকা অতিক্রম করে গেছে।

বন্ধুরা কে কোথায় খবর রাখিস? দু’এক জনের খবর কখনো সখনো জনান্তিকে ছিটেফোঁটা পাই বটে!তবে কেউ উত্তরে কেউ দক্ষিণে, হাত বাড়ানো দায়!

সেই সরোয়ার আজ মাছের ঘেরেতে জীবনটাকে নিঃসঙ্গতায় অঙ্গতা করে ফেলেছে। কী এক অজানা যন্ত্রনায় ও বিদ্ধ। তবুও তার মুখের অট্টহাসি উচ্চকিত। সিরাজ আজ বিন্দাস। মসি মমতায় এখনো তার মায়াবতি আত্মজার শোকটাকে বুকটাতে আটকে রেখেছে।

শুভ্রা- আগাগোড়া সুখেতে মোড়া সে।পপি সেই দূরগাঁয় মল্লিকায় বসবাস। শাহেদ এখন কর্মে বড় বেশী ধৈর্য্যিক,সাত্তার ধ্যানের মতো ধার্মিক। জুবু, ইকবাল আর মাহমুদ বৈশ্বিক,মৈনিক।তবে সাবের আজ এক দেশ জাদরেল সৈনিক।

তবে তাহের কঠোর কর্মীতে উচ্চাভিলাষী হয়েও মনেতে এখনো গৈরিক, কিন্তু রত্না সমাজ সেবায় একনিষ্ঠ রৈখিক। টোনা আর টোকন খোকন খোকন যেনো এখনো তাই। শুধু বাশার আজো কুমারের সভাতে লা-জবাবে খোয়াবে মত্ত।

গিয়াস আর জব্বার পৃথিবীর পাঠ মাঠ-ঘাট পেরিয়ে ঘুমিয়ে আছে গোরস্থানে।ওখানে নির্জনতা,মৌনতা,সৌমতায় এপার ওপারের মেলবন্ধনের বসবাস।

ওদিকে শাহনাজ ভালো নেই আজ। গুল নিজেতে মশগুল। আর ঐ ফাতেমা, আমাদের সেই ফাতু চঞ্চলা,আঁচল উড়ানো মেয়েটা হঠাৎ আজ জীবনটাকে যেনো থমকালো, চমকালো। কেমোতে মেমোতে আবদ্ধ। কেনো এমন হয়!? জীবনরে জীবন – বড়ই মায়াময়, বড়ই অবুঝময়। দেনা সব পাওনা সব, আপনা-আপনি শোধবোধ । এ এক ভীষন বিস্ময়, বিধাতার আনমনা চনমনা লীলা খেলা।

আমি আছি, আছি একরকম।শরীরটাকে নিয়ে বড়ই কসরত করতে হয়রে।হায়রে শরীর!সকালে হাইপারটেনশন মেনশন,আর রাতে কোলেস্টেরলকে বাগে দাগে ভাগে রাখতে হয়।

এখন রাত গভীর।সবাই গাঢ়তায় আচ্ছন্ন। মানুষ, গাছ, মাছ, পাতা,পক্ষী,অক্ষী সব মৌনতায় একাকার। দূরে,বহুদূরে একটা সারমেয় ডাকলো, প্রহর ঘোষনার জন্য।আজ আর শিয়াল নেই। আমি জেগে আছি , আমি জেগেই আছি…… , রাত পোহাবার কতো দেরী পাঞ্জেরি!?

চিঠির উত্তর দিস।ভালো থাকিস,শরীরের যত্ন নিস।

ইতি-
তোর পরানের পুরনো বন্ধু ‘মানিক’
ভেড়ামারা,কুষ্টিয়া।
১৫/০১/২০২২খ্রীঃ
রাত ১.১২

About

QMA Quorashi

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}