এটা ১৯৬৯/৭০ এর কথা৷ আমার বয়স তখন খুব সম্ভবতঃ ৩/৪ বছর৷ আমার ওসময়ের কথা কিছুই মনে নেই বলতে গেলে৷ তবুও কিছু কিছু কথা আবছা আবছা মনে পড়ে।
আমরা থাকতাম ফেনী মাষ্টার পাড়ায়৷ আমাদের বাসার সামনে থাকতো ছবি আপারা৷ ছবি আপারা ছিলেন খুব সম্ভবত ৫ ভাই আর ১ বোন৷ কেন যেন আমি ছবি আপার আব্বা আম্মাকে শশুর আব্বা শাশুড়ী আম্মা বলে ডাকতাম৷ ঐ বাসার সবাই আমাকে পাগলের মতো আদর করতেন৷ ছবি আপার ভাইয়েরা কিন্তু অনেক বড় বড় ছিলো৷ আমি শশুর আব্বা আম্মা ডাকার কি কারন ছিলো জানিনা৷
বলে রাখি, আমি কিন্তু বিড়ালের মতো ছিলাম। মানে সর পড়া দুধ খেতে ভীষণ পছন্দ করতাম। এখনও করি৷ আমাকে নাকি অনেক কষ্টে যুদ্ধের সময় ভাত খাওয়ানো ধরিয়েছিলো৷
আচ্ছা, এবার আসল কথায় আসি৷ মর্জিনা নামে আমাদের বাসায় একটা কাজের মেয়ে ছিলো৷ আমি সারাক্ষন তার সাথে সাথে থাকতাম৷ হঠাত আমি নাকি কান্না করছিলাম দুধ খাবো বলে৷ এটা শুনে মর্জিনা চুলায় দুধ গরম করতে গেলো৷ আমি দুধ খাবো বলে যখন কাঁদছিলাম, তখন মর্জিনা আমাকে ডেকে বললো, দেখেন দেখেন আপু দুধে বলক আসছে৷ সে সময়ে এক ফিতার কেরোসিন চুলা ছিলো৷ যেহেতু আমি ছোট্ট ছিলাম, তাই পাতিলের দুধ দেখতে না পেরে যেখানে কেরোসিন থাকে সেখানে ভর করে আমি পাতিলের দুধ বলক দেখতে গেলাম৷ আর ঠিক অমনি চুলা সহ কেরোসিন সহ সব দুধ আমার গায়ে এসে পড়লো। আর আমি আগুন এবং গরম দুধে দগ্ধ হয়ে গেলাম৷ সনা এসে আমাকে বার্নল লাগাচ্ছে। আমাকে নিয়ে ঘরের সবাই ব্যস্ত৷ আর আমি কান্না করছিলাম, আমি শশুর বাড়ী যাবো৷ শশুর আব্বা, শশুর আম্মার কাছে যাবো৷ আমার কান্না থামাতে না পেরে আমাকে ওই বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো৷ তারপর জানিনা কি হয়েছিলো৷ তবে সে ঘটনা আমার আজও মনে পড়ে৷ তবে আমি সর পড়া দুধ খেতে আজও খুব ভালোবাসি৷