January 21, 2022

ভালোবাসায় বসবাস!

by Fatema Hossain in STORY0 Comments

আজ অনেক অনেক দিন পর রূপার কেন জানি সকাল টা খুব ভালো লাগছে। ইদানীং তার শরীর টা ভালো যায়না। রাতের পর রাত ঘুম হয়না। সারাদিন মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। ডাঃ তাকে ঘুমের ওষুধ সাজেস্ট করলেও সে কোন এক অজানা আতংকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে চায় না।তার কেবল ই মনে হয় ঘুম যদি আর না ভাংগে।শেষ সময়ে তার স্বামী সন্তান সংসার এর চেহারা না দেখেই সে চলে যাবে! না, না তা যেন না হয়!

তবুও গতরাতে জামিল একপ্রকার জোর করেই ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।তারপর ভোরের দিকে নিজের রুমে চলে যায়।এখন তারা আলাদা ঘরে থাকে।

জামিল চেইন স্মোকার। প্রথম প্রথম প্রতিবাদ করেও কাজ হয়নি।সে স্মোক করা ছাড়েনি। একসময় ঝগড়া হবে ভেবে রূপা এ বিষয়ে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে। শ্বাশুড়ি, ননাস বলে বলে ক্ষ্যামা দিয়েছেন অনেক আগেই! মেনোপজ হওয়ার আগ পর্যন্ত রূপার ও সহনীয় হয়ে গিয়েছিল এক পর্যায়ে। কিন্তু বছর দুয়েক আগে মেনোপজ হলে কেন জানি সর্বপ্রথম এই জিনিসটাই তাকে অসহ্য করে তুল্লো। সে কিছুতেই সিগারেট এর গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

আর রূপা নাক ডাকাটাও বেড়ে যায়।তাই দুজনের মাঝে সমঝোতা হয়,দুজন দু ‘ঘরে থাকার।যদি ও প্রথম প্রথম দুজনের ই খুব কস্ট হতো। এতোবছরের অভ্যেস! জামিল তাও পারে না চলে আসে। রূপা নিজেই মানা করে। এভাবে চলতে চলতে রূপার অসুখটা ধরা পড়ে। ক্যান্সার! জামিল তাও স্মোকিং ছাড়তে পারে না। রূপার প্রচন্ড অভিমান হয়।সে নিজেকে গুটিয়ে রাখে।

বিয়ের প্রথম থেকে অনেক বছর পর্যন্ত এই জামিল তাকে চোখে হারাতো। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অনেক আদর যত্নে রেখেছে। কখনো পাশ ফিরে শুতে দিতোনা।অফিস বা কাজে যাবার সময় ও ফিরে এসে খানিকক্ষণ বুকের মাঝে জাপটে ধরে রেখে দিতো।রূপার খুব ভালো লাগতো।সে নাক ঘসে স্বামীর গায়ের গন্ধ শুকতো।এখনো সময় পেলে সে এমন করে!

আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। শীতের সকাল। ভোরে সামান্য কুয়াশাছিলো। তারপর আস্তে আস্তে রোদ উঠে বারান্দা গুলো ভরে গেল। প্রতিদিন ভোরে উঠে রূপা জামিলের ঘরে গিয়ে দেখে আসে।আজও তাই করলো। তারপর ধীরে ধীরে প্রাত্যহিক সকালের কাজ গুলো এগিয়ে রেখে বারান্দার গাছগুলোর একটু যত্ন নিয়ে তাদের সাথে কথা বলে আসলো।

বল্লো, “তোরা কি জানিস আমি যে আর বেশিদিন বাঁচবোনা! তোরা লক্ষ্মী হয়ে থাকবি।কেমন? আমি পাখি অথবা প্রজাপতি হয়ে তোদের কাছে আসবো।তখন চিনবি তো আমাকে?”

“দেখিস আবার ভুলে যাসনে যেন “এরপর কান্না লুকাতে ওখান থেকে এসে ওয়াসরুমে ঢোকে।

খানিক্ষন কান্না করে একেবারে গোসল করে বাথ টাওয়েল পরে বেরিয়ে আসে। আলমারির দরজা খুলে একটা ইট রঙের আড়ংয়ের তাঁতের শাড়ি বেছে নিল।বেগুনি ছোট পাড়ের সাথে ম্যাচ করে বাটিক প্রিন্টেড ব্লাউজ পরলো।ইদানীং দুর্বল শরীরে সোনার গহনাগুলো অনেক ভারি লাগে তাই অনেকদিন পরা হয়না। সেগুলো থেকে দুটো বালা,একটা মোটা ছোটো চেইন,তিনটে আংটি আর একজোড়া কানের টপ পরলো।এগুলো সে আগে সব সময় পরে থাকতে পছন্দ করতো।কিন্তু কেমোথেরাপির পর চুল উঠে, ভুরু পড়ে চেহারা বিবর্ন হয়ে যাওয়ায় ওগুলো এখন অনেক ওজন লাগে তাই পরা হয়না দুর্বল শরীরে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে সব গহনা গুলো পরে মুখে ক্রীম, বডিতে লোশন মাখা শেষ হলে চোখে কাজল পরে হালকা করে লিপস্টিক পরে নিল। তার খুব টিপ পরতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু এখন ভয় পেয়ে আর পরলো না।গায়ে ইম্পালস এর বডি স্প্রে টা স্প্রে করে নিল।বিয়ের সময় ছোটো ননাস লন্ডন থেকে বিয়ের বাজার করে এনেছিলেন। সেটার মধ্যে ইমপালস এর বডি স্প্রে ও ছিল।যেহেতু নতুন বউ হিসেবে ওটা প্রথম বার মেখেছিল।তাই শীত এলেই প্রতিবছর সে এই গন্ধটা নাকে পাই।আর নস্টালজিক হয়ে যায়। সেজন্য আত্মীয় স্বজন যারা এব্যাপারটা জানে তারা সবাই বিদেশ গেলে রূপার জন্য এই বডি স্প্রে টা নিয়ে আসে!

রূপা সেজে গুজে বাইরে এলো। দেখে জামিল উঠে চা এর জন্য অপেক্ষা করছে। সকাল বিকেলের চা টা সে রূপার হাতের বানানো টাই খেতে পছন্দ করে। তাই যত কষ্টই হোক সে আনন্দের সাথে এই কাজ টা করতে ভালোবাসে।বউকে আজ সাত সকালে সাজুগুজু করা অবস্থায় দেখে জামিল খুব অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো আজ কে ঘুম ভালো হয়েছে? রূপা মাথা নেড়ে উত্তর দিয়ে লজ্জা পেয়ে চা বানাতে হেঁসেলে ঢুকে যায়।

চা এর পানি চুলায় দিয়ে বেরিয়ে আসে জামিলের ডাকে। দেখে জামিল তার ঘর থেকে ডাকছে, সে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় রুমের দরজার কাছ থেকে জামিল রূপাকে হাতধরে টেনে নেয়।তারপর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে অনেকক্ষণ!রূপা পুরনো দিনের কথা মনে করে কেঁদে ফেলে। মুখ তুলে দেখে জামিল ও কাঁদছে অঝোর ধারায়!

‘রূপা তুমি সুস্থ হয়ে যাও, আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা সোনা!’
“কতো ভালোবেসে তোমাকে এনেছিলাম।এখনো অনেক ভালোবাসি তোমাকে। আমার ভালোবাসায় তো কোনো খাদ নেই।তবে কেন তুমি চলে যাবে। ”
“তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না কথা দাও”
রূপা কি উত্তর দিবে সে নিজেই জানেনা! দৈবের উপর কারো তো নিয়ন্ত্রণ নেই!

সেও স্বামীর বুকে মুখ গুঁজে তার শরীরের গন্ধ নিতে নিতে কেঁদেই চলে! আজ আর কিছুই বলতে মন চাইছে না।সময় এভাবেই যেন থমকে থেমে থাক,অনন্তকাল!

ফাতেমা_হোসেন
২১/১/২২.
দুপুর আড়াই টা

About

Fatema Hossain

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}