গোবিন্দ বলল, আপনি এতোক্ষন কোথায় ছিলেন?
বিছানার ওপর পা তুলে বসতে বসতে নওশি বলল, পাশের কামরায় । বাবাকে খাওয়ানোর পর নিজেও কিছুটা খেলাম। তারপর টিফিন বাটি ধুয়ে মুছে আপনাদের জন্য চা বানালাম। আপনারা রঙ চা খান তো ?
” হ্যা খাই । আপনি কি আজ জমিদার বাড়িতেই থাকবেন ?
” হ্যা, আমি আজ নিজ চোখে দেখতে চাই রাতে এখানে কি ঘটে। ”
” আপনার ভয় করবে না ?”
” না ”
নওশির ভয় না করলেও গোবিন্দর ভয় করছে । সে বুঝতে পারছে নওশি কেয়ার টেকারের মেয়ে না কিন্তু এই কথা বলতে পারছে না । ভেতরে ভেতরে সে ঘামছে ।
নওশি ওর খোলা চুল গুলো বাধতে বাধতে বলল, আমার ভয় করছে না কারন আমি জানি এই বাড়িতে থাকলে মেয়েদের কিছু হয় না ।
গোবিন্দ বলল, এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন, আপনি কি আমাদের জমিদার কন্যার পুরো ঘটনাটি বলবেন ?
” হ্যা বলব, কিন্তু সে অনেক লম্বা ঘটনা। বলতে গেলে আরব্য রজনীর মতো পুরো রাত কেটে যাবে ।”
” তাহলে তো শোনায় উচিত ”
” গল্প শুরুর আগে আমরা কি চা খাব ?”
” অবশ্যই ”
মিনিট খানেক না যেতেই নওশি এক হাতে চায়ের ফ্লাস্ক অন্য হাতে দুটো কাপ নিয়ে এলো । বিছানার ওপর ফ্লাস্ক রেখে চা ঢেলে গোবিন্দর দিকে, পরে অন্য কাপ জুয়েলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আমি খুব দুঃখিত , মাত্র দুটো কাপ আছে । আমি বরং ফ্লাস্কের ঢাকনিতেই ঢেলে খাই ।
গোবিন্দ ঠোটের কাছে চায়ের কাপ এনে বলল, রংটা বেশ লাল।
নওশি নিজের জন্য চা ঢালতে ঢালতে বলল, অরজিনাল সিলেটের চা। জমিদারের নামে আসে। খেয়ে দেখুন ঘ্রান এবং স্বাদ দুটোই অপূর্ব ।
গোবিন্দ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, সত্যি অপূর্ব । এবার ঘটনাটি বলুন।
” আগে চা খেয়ে নিন , তারপর বলছি।
অর্ধেক চা শেষ করতেই জুয়েল বলল, আমার মাথা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে।
নওশি বলল, হ্যা প্রথমে মাথা ঝিম ঝিম করবে, তারপর মাথা ঘুরতে থাকবে, এরপর শরীর অবশ হয়ে আসবে। এক সময় আপনারা ঘুমিয়ে পড়বে সেই ঘুম আর ভাংবে না ।
গোবিন্দ চায়ের কাপ নামিয়ে বলল, ঘুম ভাংবে না মানে কি ?
” মানে আপনারা মারা যাবেন ”
গোবিন্দর লোমকুপগুলো শিওরে উঠল ,মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে, এই ভুল আর শুধরাতে পারবে না । নওশি বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে হাসতে শুরু করল । গোবিন্দ এগিয়ে আসতে গিয়ে বুঝল ওর সমস্ত শরীর কাপছে।
গোবিন্দ বলল, আপনি এরকম করছেন কেন ?
” মানুষ মারতে আমার খুব কস্ট হয় ”
” আমরা কি মারা যাব ”
“হ্যা ”
” আপনি কি চায়ের সাথে বিষ মিশিয়ে দিয়েছেন ?”
” হ্যা”
” আপনি কেন এরকম করলেন নওশি ?”
” আমি নওশি না ”
গোবিন্দ ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখল তার সামনে যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে সে নওশি না । সম্ভবত এই মেয়েটির নাম হেলেন , জমিদারের মেয়ে । গোবিন্দ মেঝেতে পড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে দেখল জুয়েল খাটের ওপর ঘুমিয়ে পড়েছে। বেচে আছে না মরে গেছে সে জানে না । হেলেন আবার হাসতে শুরু করেছে। হেলেনের দিকে তাকিয়ে দেখার সময় নেই। গোবিন্দ অবশ শরীর টেনে টেনে খাটের কাছে এলো। ব্যাগ হাতড়ে হাতড়ে ডায়রিটা বের করল । এই ডায়রিতে সব ঘটনা লিখে রাখতে হবে । সে কাপা কাপা হাতে লিখছে। এক সময় হাত থেমে গেল।

চলবে…

About

Anis Ahmed Oniket

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}