মঈন বলল, কে , কে ওখানে ?
” আমাকে বাঁচান ভাই ” মেয়েটি কাতর কন্ঠে বলল।
মঈনের মন দয়ায় ভরা । মেয়েটিকে বাঁচাতে সে বাইরে চলে এলো । আজ কোনো পচা গন্ধ পাচ্ছে না । আগরবাতি জ্বালানোর গন্ধ পাচ্ছে। রাতে নিশ্চয় বুয়া জ্বালিয়েছে , ভাবে মঈন।
মেয়েটি আবার বলল, আমাকে বাঁচান ভাই
” কি হয়েছে বলুন তো ”
” কাজ শেষে বাড়ি যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দুজন লোক আমার পিছু নেয় ”
” আপনি কি কাজ করেন ।”
” আমি নার্স , হাসপাতালে চাকরি করি ”
” সরি, আপনার পোষাক দেখেই বোঝা উচিত ছিল, কিন্তু হাসপাতালের পথ ছেড়ে এদিকে কেন ?”
” ভয়ে দৌড় দিয়ে কোন দিকে যে এসে পড়েছি খেয়াল করিনি ”
” আপনার নাম কি ”
” অনিতা ”
” আমি আপনার জন্য কি করতে পারি ?”
” আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিন ”
” আপনি থাকেন কোথায় ?’
” কলিগ্রাম ”
“সেতো অনেক দূর ”
” আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিন ভাই ”
” আপনি বরং এক কাজ করেন। আজ রাতটা এখানেই থেকে যান। কাল সকালে আপনি নিজেই চলে যেতে পারবেন ”
“বাড়ির সবাই চিন্তা করবে ”
” কিন্তু এতো রাতে যাওয়া কি ঠিক হবে ?”
” এই উপকারটুকু করে দিন ভাই ”
পাহারাদার কে সাথে নিয়ে মঈন আমবাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটছে। কিছুটা পথ আসার পর ওরা ধান ক্ষেতের আইল ধরে চলা শুরু করল ।
অনিতা বলল, সামনে একটা সাঁকো পড়বে। বাঁশের সাঁকো । পার হতে পারবেন তো ?
” জ্বি পারব ”
মুখে জোর দিয়ে বললেও পায়ের তলা শির শির করে উঠল। জীবনে সাঁকো পার হয় নি । মঈন সাঁকোর কাছে এসে দাঁড়ালো । ছোট্ট খাল বারো চৌদ্দ ফুট লম্বা। খাল পানিশুন্য , আগাছায় ভরা ।
মঈন ডাকল, পাহারাদার ?
” জে সার ”
“তুমি হারিকেন নিয়ে ওপারে যাও ”
” আচ্ছা ”
” শোনো ”
” বলেন ”
” লুঙ্গিটা উচু করে পর, পড়ে যাবে ”
” পড়ব না ।অভ্যেস আছে ”
শহীদ ও এই কথা বলেছিল । এই গ্রামের নতুন ফ্যাশন মনে হয় । পাহারাদার পার হতেই মঈন বলল, অনিতা আপনি এবার পার হয়ে যান ”
অনিতা বলল, আপনি আগে যান ।
মহাবিপদ । সেই বিপদ নিয়ে একসময় সাঁকোর মাঝামাঝি চলে এলো মঈন। কিসের যেন শব্দ হচ্ছে- ছলাৎ , ছলাৎ । ঢাল বেয়ে পানি নেমে যাওয়ার শব্দের মতো । নীচু হয়ে তাকাতেই দেখল খাল পানিতে ভরা। পরিস্কার পানি । মঈন চোখে হাত দিল। অন্ধ হওয়ার কথা আছে ভাগ্যে । এখন থেকেই কি কম দেখতে শুরু করেছে ? দ্বিতীয় বার তাকাল। পানিই দেখতে পাচ্ছে। অথচ এই খালে কিছুক্ষন আগেও পানি ছিল না ।
গাছপালা নড়তে শুরু করেছে। বাতাস নেই। বাতাস থাকলে ওর শরীরেও লাগত। তাহলে কেন নড়ছে ? গাছের ওপর জ্বল জ্বল করে কি যেন জ্বলছে । মঈনের আর যেতে ইচ্ছে করছে না ।
অনিতা বলল, কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে গেলেন কেন ?
” ভাবছি ”
” কি ভাবছেন ?”‘
” না না কিছু না, আমি ঠিক আছি ”
সাঁকো পার হতেই অনিতা বলল, এবার এই নৌকায় করে আমাদের গ্রামে যেতে হবে । আপনি আগে উঠুন ।
মঈন বলল, আপনি আগে উঠুন
” তাহলে হারিকেন সরান ”
” আলো না থাকলে পড়ে যাবেন ”
” পড়ব না ”
হারিকেন নিয়ে পাহারাদার দাঁড়িয়ে থাকল । অনিতা নৌকায় উঠল । মঈন নৌকায় উঠার জন্য পাটাতনে ডান পা রাখল। ওর শরীর গুলিয়ে উঠল সেই সাথে। কোথা থেকে যেন আতরের গন্ধ আসছে। আশে পাশে কোনো শ্মশান আছে কিনা জানা নেই। বাম পা উঠাতে গিয়েই থেমে গেল । সে খুব ভয় পেল । হারিকেনের আবছা আলোয় দেখতে পেল অনিতা শুন্যে ভাসছে। ওর পা নৌকা স্পর্শ করে নেই।
মঈন দুই পা পিছিয়ে এসে ডাকল, পাহারাদার , পাহারাদার ।
কোনো সাড়া নেই। পেছনে তাকিয়ে দেখল পাহারাদার নেই । হারিকেন মাটিতে রাখা । সামনে তাকিয়ে দেখল অনিতা হাসছে। শব্দ করে হাসছে। ওর শরীরে নার্সের পোষাক নেই । শাড়ি পরে আছে। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে সেই সাথে শাড়ির আচল। ওর শরীরে এক ধরনের আলো। সেই আলোতে দেখতে পেল মঈনের সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে অনিতা নয়। সে একটা কঙ্কাল অথবা ভুত । সেই কঙ্কাল টা হাত বাড়িয়ে ওর দিকেই আসছে।

চলবে…

About

Anis Ahmed Oniket

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}