পলি ডাইনিং টেবিলের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। পুরো একটা বড় খাসি দিয়ে সুন্দর করে ডিশ সাজিয়েছেন রিতা। তিন পদের মাছ, দুই পদের মাংস, সালাদ, সবজি, পোলাও, ডেজার্ট দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েছেন তিনি।

কলি বললো দেখেছিস খালার কান্ড! আমাদের নিজের খালা হলেও কি এমন করে আমাদের কেউ করতো!

রিতা এসে ডাইনিং এ দাঁড়ালেন, বললেন কি রে কলি, কি গল্প হচ্ছে দুই বোন মিলে?
– খালা এই চার/পাঁচ ঘন্টায় এতো কিছু কখন করলেন?
– আরে, আমি সব কিছু আগে রান্না করে, বৌভাতে গিয়েছে। রহিম বাবুর্চির দায়িত্ব ছিল, আস্ত খাসি প্রিপিয়ার করা। এটা তোমার খালুর শখ।
– খালু কোথায়?
– জামাইয়ের সাথে গল্প করছে। ও তো খুব আড্ডা প্রিয় মানুষ। মুখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। বেয়ান সাহেব, তোমার মা, কেন আসলেন না! মন টা খারাপ লাগছে। জাহিদ ও নাকি বাজারে, সাথে শাহিদ ও। জলিও আজ চলে গেল।
– জলিপা, বিয়ের দিন চলে যেতো। আমরা জোড় করায়, এতো দিন থেকেছে। তার বাড়ীতে নাকি কে মেহমান রেখে আসছে।
– তোমাদের ভাবী, জাহান, তার নাকি শরীর খারাপ লাগছে। আসবেনা।
– ওহ।
– ননদের জামাইয়ের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে হয়তো। আইরিন, তারিন আসবে।
– ভালো হয়েছে।

আবিদ খুব লজ্জা পাচ্ছে, তাদের বড় পরিবার। খুব হিসেব করে চলেন তার আব্বা। এতো পদ সে কখনোই এক সাথে দেখে নি।

সে খুব আড়ষ্ট হয়ে বসে বসে খাচ্ছে। পলির আজ মনে হচ্ছে সে তার আপন খালার বাসায় খাচ্ছে। কলি, নাহিদ, খালার দুই ছেলে-মেয়ে খুব হৈ চৈ করছে দুলাভাই নিয়ে।

পলি যে রুমে থাকবে, সেখানে এক গুচ্ছ রজনী গন্ধা খাটের পাশে ফুলদানী তে রেখেছেন রিতা। বিছানায় সাদা রঙের সুন্দর চাদর। গোলাপ ফুল দিয়ে হার্ট সেইপ করে, ভিতরে লিখেছেন এ+পি।

খাটের পাশে এক জগ পানি, এক টি গ্লাস উল্টো করে পিরিচ দিয়ে রাখা। ওয়াশ রুমে টাওয়াল পর্যন্ত  রাখা।

পলি শুধু খালাকে দেখছে, আর ভাবছে এই মানুষ কত সৃজনশীল। রজনীগন্ধার সুবাসে মৌ মৌ করছে, পুরো বাড়ী। পলির এই সুগন্ধ খুব পছন্দ। যদিও আবিদের বাসায় কোন খাট সাজানো হয়নি, কিংবা কোন ফুল ও ছিল না। এখানে দেখে, খুব ভালো লাগছে তার।

সকাল বেলা আকাশী রঙের একটা রাজশাহী সিল্ক শাড়ী এনে  পলিকে দিলেন রিতা। এটা নাকি গত মাসে তিনি, তার দেবর কে দিয়ে আনয়েছেন। একটা তার জন্য,  অন্যটি পলির জন্য। রিতা বললেন আশা করে, তোমার পছন্দ হবে পলি।
– খালা, আপনি যে কত ভাবে ঋণী করছেন!
– কি বলো পলি? তোমাদের মতো এতো মিষ্টি দুটি মেয়েকে সবাই খুব আদর করবে। আর পলি, প্রফেসর সাহেবেরব পরিবারের মানুষ একটু হিসেব করে চলেন, তুমি তাদের সাথে মানিয়ে নিবে, এক সময় আস্তে আস্তে তারাও ঠিক হয়ে যাবে।
– জি খালা।

রাহেলা বেগম দুই পদের মাংস রাম্না করেছেন, রুই মাছের দোপেয়াজা, চিংড়ি মাছ ভুনা, কই মাছ ভুনা, সবজি, পোলাও, সালাদ সব তিনি রান্না করেছেন। বাজার করেছে জাহিদ। এখন তিনি বেরেস্তার জন্য পেঁয়াজ কাটছেন। ঘড়িতে বারো টা বাজে, এখনই হয়তো পলি জামাই নিয়ে আসবে। কলি ও নেই এখানে। এক হাতে গ্যাসের চুলায় খুব ঝামেলা হয়ে যাচ্ছে তার।

শারমিন দরজার সামনে এসে বললেন, মা কি এখন পেঁয়াজ কাটছেন? রান্না কি করবেন? একটা সহজ রাস্তা আছে, মোরগ পোলাও করে নিন, সাথে ডিম ভুনা সালাদ। অনেক ভালো হবে। শর্টকাট।
– আমার রান্না শেষ মা। এখন বেরেস্তার জন্য পেঁয়াজ কাটছি।
– রান্না শেষ?
– হ্যা
– আমার একা একা জিহান কে নিয়ে খুব ঝামেলা হয়ে যায়। ও নেই, এজন্য রাতে ঘুম হয়নি।
– সমস্যা নাই, মা। রেস্ট নাও।

শারমিন ঢাকনা খুলে খুলে সব দেখছে। দেখে বললো,
মা, এতো কিছু করেছেন কেন? কাল দুপুর পর্যন্ত থাকবেন, রাতের রান্নার জন্য রাখতেন কিছু বাজার।
– না, মা। জাহিদ-শাহিদ সন্ধ্যার পর চলে যাবে। আমি আর নাহিদ কাল সকালে যাবো। আমি, তোমাদের পরিবারের সবাইকে দাওয়াত করেছি আসার জন্য!
– না, ওরা হয়তো আসবেনা, ব্যস্ত তো অনেক। আম্মা আসবেন বলেছেন।

আবিদ বসার ঘরে বসে দুধ শরবত খাচ্ছে। পলিকে আকাশী রঙের রাজশাহী সিল্কে দারুন স্নিগ্ধ লাগছে।

শারমিন এসে বললেন আবিদ ভাই, নাকি আজ থাকবেন না?
– কাল বাড়ী যাবো ভাবী।
– আমরা মাছ কবে খাচ্ছি? কখন বাজারে যাচ্ছেন।
– জি, একটু পরে যাবো।

রাহেলা বেগম বললেন, না না জামাই এবার থাক, আগামী মাসে এলে বাজার করবে।
– না, আমি বাজারে যেতাম এখনই।
– থাক, আজ তো সময় কম।

আবিদ যেন হাঁফ ছেড়ে বসলো, হয়তো লজ্জায় সে বাজারে যেতে বলেছে। কারণ সে চিন্তা করেছে শ্বশুর বাড়ীতে আগামী মাসে গেলে বড় করে বাজার করবে। এখানে, বাজার করার সময়ই নাই।

সাহেদা খানম, রান্নাঘরে গিয়ে বললেন, বেয়ান নতুন জামাই কত কেজী মিষ্টি নিয়ে এসেছে?
– এনেছে অনেক।
– প্যাকেট দেখছি মাত্র পাঁচ টা, সব কি বিলি করে দিয়েছেন নাকি?

শারমিন বললো, কিপটা নাম্বার ওয়ান, ফেরা যাত্রায় এসেছে মাছ বাজার নাকি পরে করবে!
– বলিস কি?

রাহেলা বেগম বললেন, আমি না করেছি। এখন বাজার এনে, খাওয়ার সময় কোথায়? থাকবেনা যখন থাক। পরবর্তীতে আনবে। আর মিষ্টি পাঁচ কেজী এনেছে, দই দুই পাতিল এনেছে। আর এনে কি করবে?
– পাড়া-প্রতিবেশী আছে না?
– আমরা যাদের চিনি, তাদের জন্য অনেক বেশি হয়েছে।

কলি অবাক হয়ে দেখছে রাহেলা বেগম আজ বেয়ানের সাথে বেশ কড়া হয়ে কথা বলছেন। সাহেদা খানমের মতো মানুষ দের মাঝে মাঝে কথা শোনানোই  উচিত।

আজকে পলি বিদায়ের সাময় মায়ের গলা জড়িয়ে খুব কান্না করছে, আর বলছে আজ মনে হচ্ছে, বিয়ে করে চলে যাচ্ছি। তুমি আবার কবে আসবে মা, কবে!

রাতের বেলা, সাঈদ অফিস থেকে আসলো বাসায়। রাহেলা বেগম ছেলেকে দেখে বললেন, কি রে তুই?
– কাল সরকারি বন্ধ, তাই ছুটি। এজন্য এসেছি।
– আলহামদুলিল্লাহ, দেখা হয়ে গেল।
– জাহিদ-শাহিদ কোথায়?
– বাড়ী চলে গিয়েছে। আমি আর নাহিদ কাল যাবো।
– কলি বাড়ী যাবেনা?
– কলির মাস্টার্সে ভর্তি হবে।
– এখন ও রেজাল্ট হওয়ার বাকি, এখন এখানে থেকে কি করবে?
– যুবায়ের ভাই, থাকতে বলেছেন। টাইপিং এর কাজ শিখেছে, সেখানে কাজে লাগিয়ে দিবেন।
– মা, আমার তো লজ্জা লাগে, খালুকে, খালাকে যেভাবে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করছো তোমরা।
– বাবা, উনি মন থেকেই আদর করেন।
– আমি কি আমার শালীর মেয়ের ননদ দের ইচ্ছে করে জায়গা দিতাম, তোমরা করকতে বাধ্য করছো ।

কলি সাথে সাথে বললো ভাইজান, আমি কাল বাড়ী চলে যাবো। আপনি চিন্তা করবেন না।
– তুই বড় বেয়াদব হচ্ছিস। বড় দের মাঝে কথা বলিস।

রাহেলা বেগম নিচের দিকে তাকিয়ে আছেব, কি করবেন তিনি? সত্যি কি তিনি আর তার মেয়েরা রিতা কে বেশি ঝামেলায় ফেলে দিচ্ছেন? নাকি তিনি মন থেকে করছেন? কেন জাহিদ চলে গেল আজ, সবাই এক সাথে কাল গেলেই ভালো হতো। তিনি কি করবেন কলিকে নিয়ে, চিন্তায় পরে গিয়েছেন…..

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
১৫.০১.২০২২

About

Annama Chowdhury

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}