আজ অনেক যত্ন করে কলিকে খাওয়াচ্ছেন শারমিন। বার বার বলছেন, এই নিজের মনে করে খেও কিন্তু!

কলি কে দুই টুকরো মাছ জোর করেই দিলেন, কলি খেতে পারছেনা। তবুও বলছেন, পারবে পারবে খাও।

শারমিন খাওয়ার পর, রান্নাঘরে কলিকে ডেকে বললো, কলি তুমি আমাকে বাঁচাও।
– কি হয়েছে ভাবী?
– আমি প্রেগন্যান্ট।
– আলহামদুলিল্লাহ!
– জিহানের বয়স কত বল? এখন আরেক টা বাবু, আমি এখন বাবু নিতে চাইনা কলি।
– কি করবে?
– আমার ইচ্ছে অন্যরকম ছিল, কিন্তু তোমার ভাই কোন ভাবেই রাজী নন। আল্লাহ দিয়েছেন, কত জনই মা হতে পারেনা। তাই সে, বাবু রাখতে চায়।
– ঠিকই বলেছেন ভাইজান।
– এখন, তুমি আমাকে সাহায্য না করলে হবেনা। এখন থেকে তুমি আমার বাসায় থাকবে, আমার একা থাকতে এখন খুব ভয় লাগে।

কলি এতোক্ষনে ভাবীর আসল রহস্যা ধরতে পারলো। এতো খাতিরের এই হচ্ছে, মূল বিষয়।

কলি বললো ভাবী, এভাবে মাকে একা ফেলে রেখে আমি আসতো পারবো না।
-সমস্যা নাই, প্রয়োজন হলে, আম্মাও থাকবেন এখানে। নাহিদ-শাহিদ মেসে চলে গেল।
– ভাবী, এই মুহুর্তে কিছুই বলতে পারছিনা। বাসায় গিয়ে চিন্তা করে, জানাবো।
– চিন্তার কি আছে। এই গেস্ট রুমে তুমি থাকবে। শুধু আমার সাথে একজন মানুষ থাকবে, এই আর কি! বুয়া কাজ করবে, আরেকটা মেয়ে আছে, সেও থাকবে। কিন্তু তারা কি আর আপন মানুষ বলো!
– আম্মার সাথে কথা বলি, পরে জানাচ্ছি।
– আম্মার কোন সমস্যা হবে না, আমি জানি।

কলি হাসির রেখা, মুখে এঁকে রুম ত্যাগ করলো! ভাবীর এতো যত্ন আর ভালো রান্নার এই হচ্ছে কারণ!

পলির শ্বাশুড়ি পলির রুমে এসে বললেন, পলি, আবিদের সাথে আমার সামান্য গোপন কথা আছে। তুমি বাইরে যাবে?
– জি আম্মা!
– রাগ করনি তো!
– কেন? না, না রাগ করিনি।
– আচ্ছা।

আবিদের পাশে বসে তিনি ছেলেকে বললেন, আবিদ বেতন আর টিউশনি মিলে যে টাকা আসে, তাতে কি বউ রেখে খাওয়াতে পারবি?
– কেন হঠাৎ এই প্রশ্ন।
– যা জিজ্ঞেস করছি, তার উত্তর দে।
– পরিবার নিয়ে শহরে থাকা, অনেক ঝামেলার। কিন্তু কেন এসব জিজ্ঞেস করছো?
– পরে বলবো। আর বউমার মাস্টার্সের ক্লাসের দরকার নেই! কি করবে এম.এ পাশ করে? চাকরি করাবি?
– এটা ওর ইচ্ছে!
– ওর ইচ্ছে আমি জানি। আচ্ছা যাই, ভাত নামিয়ে আসি।
– তুমি কেন এসব বললে হঠাৎ?
– রাতে বলবো, এখন কি কথা হয়েছে, বউমা কে বলার দরকার নাই। আমি যাই।

পলির অবচেতন মন বারবার ভাবছে শ্বাশুড়ি কি এমন গোপন কথা বলছেন! তিনি বলতেই পারেন। এটা কি তার সম্পর্কে, না অন্যকিছু! তবে, আবিদ তাকে নিজ থেকে কিচ্ছু না বললে সে প্রশ্ন করবেনা। যদিও তার মনে প্রচন্ড কৌতুহল হচ্ছে।

জলিকে রেখে বড় ছেলের বাসায় দাওয়াতে আসেন নি রাহেলা। তাই শারমিন যত্ন করে শ্বাশুড়ি আর ননদ কে তরকারি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। টিফিন হাতে দিয়ে কলির হাত ধরে বলছেন প্লিজ নেগেটিভ আনসার দিওনা, নয়তো আমার নেগেটিভ কিচ্ছু করতে হবে।

কলি রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছে। শাহিদ আর জাহিদ সামনে হেঁটে যাচ্ছে। রনি দুলাভাই বাড়ীতে চলে গিয়েছে। কলি টিফিন হাতে নিয়ে ভাবছে সে কোন ভাবেই থাকবেনা, তার আগের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি তিক্ত! কিন্তু মা কি করবেন, কি করতে বলবেন, তাই নিয়ে খুব চিন্তা করছে সে…..

চলবে…

About

Annama Chowdhury

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}