আমার ছেলেবেলা কেটেছে মতিঝিল এজিবী কলোনীর মুক্ত অবারিত পরিবেশে। আমার শৈশবকালে আমাদের আনন্দ অনেক বেশী ছিলো কারন আমার নানুবাসাও ছিলো মতিঝিল এজিবী কলোনীতে, আমার ছয় মামা দুই খালা সবাই আমার বড় ছিলেন শুধু আমার ছোটমামা ও আমি সমবয়সি ছিলাম, আর মাসুদ মামা আমার বড় হলেও আমরা সহপাঠী বন্ধু ছিলাম ছেলেবেলা থেকেই। আমার নানু খুব চেষ্টা করেছিলেন আমি যেনো এই দুইমামাকেও নাম ধরে না ডাকি কিন্তু আমি নাম ধরে ডাকা ও তুই বলা দুটোই করেছি।
আমাদের বাসার সামনে বিশাল ঈদগাঁও মাঠ সন্ধা হলেই সব উঠতি বয়সের যুবকদের আড্ডা হতো বাসা থেকে দেখতাম, একদম ছেলেবেলার কথা বলছি ।সেই আড্ডা থেকে মাঝে মাঝেই একটা সুরেলা কন্ঠের সুরের যাদু রাতের আঁধার ভেদ করে ভেসে বেড়াতো। আস্তে আস্তে জানলাম তার নাম আজম খান ।তার কন্ঠ ভেসে আসলেই আমি দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াতাম আর মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। মনে হতো কলোনীর বাতাসে ভেসে বেড়াতো সেই মধুর সুরেলা কন্ঠ।
রেললাইনের ওই বস্তিতে , ওরে সালেকা ওরে মালেকা, বা আলাল ও দুলাল, সেই গান গুলো শুনতাম আর সেই ছোট্ট বয়সেই আমার মনে খুব দাগ কেটেছিলো গানগুলি। তার অনেক দিন পর আমার বিয়ের পর মতিঝিল এজিবী কলোনীতে আম্মার বাসায় গিয়েছি সামিনকে নিয়ে, গিয়ে শুনলাম ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠান হবে রাতে আজম খান গান করবে, আমি তো শুনে বাপপীকে বললাম আমি থাকবো আম্মার বাসায়, নিজের বাসায় ফিরে যাবো না আজ। তারপর থাকলাম আর বেলকনিতে দাডিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আজম খান এর গান শুরু হবে? রাতের আধার ভেদ করে তা ছড়িয়ে পড়বে সমস্ত কলোনীর আকাশ বাতাশ জুড়ে।
শহীদ জননী জাহনারা ইমামের “একাত্তের দিনগুলি” বইটি পড়বার সময় পড়েছি মেলা ঘর এর ট্রেনিং এর সময় শহীদ মুক্তিযাদ্ধা রুমীরা অনেক রাতে আজম খান এর গান শুনতে পায় রাতের আধার ভেদ করে “হিমালয় থেকে সুন্দরবন হটাত বাংলাদেশ”! সবাই নিস্তব্ধ হয়ে সেই গান শুনছিলো। আসলেই তাই পপ সম্রাট আজম খান এর কন্ঠটাই ছিলো মুগ্ধ হবার মতো। যা মন মাঝে এক ভালোবাসার সুর বইয়ে দিতো।
আজ আটাশে ফেব্রুয়ারী পপ সম্রাট আজমখাঁন এর জন্মবার্ষিকী।
গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি মরণোত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযাদ্ধা এই পপ সম্রাট আমার প্রিয় শিল্পী আজম খানকে।