আমি পল্টন ময়দানে সমাবেশ দেখেছি
ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এখানে এসেছে
মিছিলে মিছিলে মানুষ এসেছে
এক বিরাট জনসভা
আজ সরকারীদল
কাল পরশু বিরোধীদল
ডান বাম সব এখানে জনসভা ডেকেছে।

এই মাঠ আমাকে পরিচয় করে দিয়েছে
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবিক মুখ
বিরোধীদলের গগনবির্দীন কন্ঠ
রাজনৈতিক রথী-মহারথীদের মুখ
তখন প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দীন
আমি কিশোর
আমি মাঠের আশপাশে প্রতিদিন সূর্য উদয়ের সময় আসি
সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় চলে যাই
বঙ্গভবনের সম্মুখ দিয়ে
বাবার হাতে হাত ধরে।

আমি কিশোর বলছি
আমি বাবার হাত ধরে
আমি প্রতিদিন এখানে আসি
নিম্ন মধ্য পরিবারের জীবিকার তাগিদে
আমি ঢুকে পড়ি মিছিলের ভিতর আপন কৌতূহলে
আমি উপস্থিত হই পল্টন ময়দানে
দাঙ্গা পুলিশের বহরে রাজপথ রগরগে থমথমে
আমি টাকার বিনিময়ে পল্টনে যাইনি
আমি রুটি বিস্কুটের লোভে পল্টনে যাইনি
আমি ভাইসব ভাইসব শুনতে পল্টনে যাইনি
আমি আমার দেশের আগামী পরিকল্পনা শুনতে মাঠে গিয়েছি।

আমি গর্বের সাথে বলছি
আমার কিশোর চোখের চাহনি সুস্পষ্ট ছিল
কত টিয়ারগ্যাসে চোখ রাঙ্গা হয়ে যেত
কত ব্যারিকেডে সড়কে যানযট হয়ে যেত
কত হরতাল অবরোধ দেখেছি
কত বিচিত্র পোস্টার দেখেছি
কত বিচিত্র ভাষন শুনেছি
কত গুলির শব্দ শুনেছি
জনসাধারণের কষ্ট দেখেছি
আবার হুলস্থুল আনন্দ দেখেছি
টোকাই ছেলেরা শহরের রাজপথে মাঠ বানিয়ে ফুটবল খেলেছে
এইসব গাঢ় হরতাল দিবসে।

তখন নটা পাঁচটা অফিস ছিল না
তখন ক্রিকেট এত জনপ্রিয় ছিল না
বহুবার আকরাম খান আর বুলবুল কে স্টেডিয়ামে দেখেছি বিনা টিকেটে
তখন মুন্না ছিল প্রিয় খেলোয়ার এপার ওপার
বাংলার কিংব্যাক
তখন আমি কিশোর
তখন আমার স্কুলে থাকবার কথা
তখন আমার বন্ধুদের সাথে খেলবার কথা
তখন আমার শিক্ষকদের সাথে পাঠ নিয়ে কথা বলার সময়
অথচ আমি পল্টন ময়দানে
অথচ আমি জীবনের মুখোমুখি
আমি কথা শুনছি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে
কথা শুনছি বিরোধী নেত্রীর মুখ থেকে
রথী মহারথীদের মুখ থেকে
অথচ আমি অবাক বিস্ময়
ডিআইটি রোডে তখনো কয়েকটি বাস্তুহীন পরিবার দেখেছি
একঝাঁক টোকাই দেখেছি
মেইড ইন বাংলাদেশ।

আমি বায়ান্নর ইতিহাস শুনেছি এই মাঠে
আমি উনসত্তুরের ইতিহাস শুনেছি এই মাঠে
আমি উত্তাল সমুদ্রের একাত্তরের গল্প শুনেছি এই মাঠে
আমি ভয়াবহ পঁচিশে মার্চের কালোরাতের ইতিহাস শুনেছি এই মাঠে
আমি রণাঙ্গনের সম্পূর্ণ ইতিহাস শুনেছি এইমাঠে
আমি আরো শুনেছি
চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের ইতিহাস
পঁচাত্তরের নির্মম ইতিহাস
স্বৈরতন্ত্রের নিপাত যাক এর ইতিহাস
দুর্নীতির ইতিহাস, সন্ত্রাসের ইতিহাস
শিক্ষাঙ্গনে রণাঙ্গনের ইতিহাস
দ্রব্য মূল্যের বৃদ্ধির ইতিহাস।

আমি কিশোর বলছি
আমি আর ভাষন শুনতে চাই না
আমি খাদ্য চাই খাদ্য নির্ভেজাল খাদ্য
আমি শিক্ষা চাই শিক্ষা সুশিক্ষা স্বশিক্ষা
আমি কাজ চাই কাজ দূর্নীতিমুক্ত কাজ
আমি আমার দেশের মানুষের মুক্তি চাই
স্বাধীনতার মত করে
সার্বভৌমত্বের মত করে
মাথা উঁচু করে পতাকার মত
কোন আমলার কাছে জিম্মি হতে চাই না
কোন রাজনৈতিক নেতার হাতে জিম্মি হতে চাই না
কোন শিল্পপতির সম্পদ গড়ার মেশিন হতে চাই না
কোন দারিদ্র্যের কলঙ্কতিলক হতে চাই না।

আমি সেদিন প্রধানমন্ত্রী কাছে বলতে পারতাম
আমি সেদিন বিরোধী নেত্রীর কাছে বলতে পারতাম
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
জন্ম দিয়েছো মাগো তাই তোমায় ভালোবাসি’

আজ আমি চিরযৌবনা এক নিরপেক্ষ সময়
আমি বাংলাদেশ
আমার পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেছে
কত মানুষ ভূমিহীন
কত মানুষ দিশাহারা নির্মম বাস্তবতার সাজঘরে
কত মানুষ সম্পদের মালিক
কত মানুষ বৃদ্ধাশ্রম
কত মানুষ প্রবাসী
কত মানুষ দেশান্তরী
কত মানুষ হয়ে গেছে রোদে পোড়ে তামা
কত মানুষ হয়ে গেছে কলাগাছ আঙুল ফু’লে
কত নারী হয়ে গেছে ধর্ষণের হাতে বলি
কত যুবক হয়ে গেছে বেকারত্বের হাতে খুন
কত চঞ্চলা প্রাণ হয়ে গেছে নেশার রাজ্যে নিস্তেজ
কত প্রেমিক প্রেমিকার হয়ে গেছে স্বপ্ন ক্ষয়।

আমি প্রধানমন্ত্রী সহ সকল রাজনৈতিক রথী-মহারথীদের বলছি
আসন্ন আবার জনসভা ডাকুন
আবার ইতিহাস শুনি— বায়ান্ন, ছেষট্টি, উনসত্তর, উত্তাল সমুদ্র একাত্তর
আমার সোনার বাংলা
আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই
আপনারা বলুন—
আমাদের মাটি সোনা
আমাদের জনতা কেন সোনা হবে না?
আমাদের কেন ঐক্য হবে না?
অথবা ঘোষণা করুন সম্মিলিত ভাবে
আর কোন জনসভা হবে না।

আমাদের জনসভার কোন প্রয়োজন নেই।

তোমরা পার্কে রিসোর্টে যাও
প্রেম কর, বাদাম খাও, হাওয়া খাও
প্রিয়ার হাত ধরে বসে থাকো
কাজে যাও, মাঠে যাও
আমাদের জনসভার কোন প্রয়োজন নেই।

আমি পল্টন ময়দানে সমাবেশ দেখেছি
ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এখানে এসেছে
মিছিলে মিছিলে মানুষ এসেছে
এক বিরাট জনসভা।

শাহ্ কামাল
২৫ শে মার্চ,২০২২
ফতুল্লা।

About

শাহ্ কামাল

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}