“আপনারা কবে থেকে একে অপরকে চেনেন?”
নিস্তব্ধ ও শান্ত প্রকৃতির মাঝে মনে ক্রোধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ব্যক্তি আমার উক্ত কথাটি শ্রবণ করা মাত্রই আলগোছে পিছে মুড়লো। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একবার দুজন দুজনের মুখ চাইলো। আরহান এগিয়ে এলেন আমার দিকে। তৃষ্ণা পুনরায় আকাশের পানে তাকালো।
আরহান আমার কাছে এসে ভাবলেশহীন কন্ঠে উত্তর দিলো, “ছোট থেকে।”
আমার করা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে আবারও প্রশ্ন করলাম, “কীভাবে?”
নিজের শত্রু, সবচেয়ে বড় শত্রুর সাথে প্রকৃতি বিলাসেরর মানেটা আমার কাছে একদম অপরিষ্কার। এজন্যই এই প্রশ্ন করা।
আরহান পুনরায় বললেন,“এক সময়ের প্রিয় বন্ধু ছিলো সে।”
এটুকু বলে থেমে, আবারও বললেন,“বর্তমানের প্রিয় শত্রু।”
আমি অবুঝ চোখে তাকিয়ে রইলাম। প্রিয় বন্ধু কী করে প্রিয় শত্রু হতে পারে? আর শত্রু কারোর প্রিয় কী করেই বা হয়?
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আরহান বললেন,“এবার আমাদের ফিরতে হবে।”
আমি রয়ে সয়ে উত্তর দিলাম,“হুঁ।”
একবার তৃষ্ণার দিকে তাকালাম। তখনই তৃষ্ণা তার দৃষ্টি আকাশপান থেকে সরিয়ে আমার পানে ঠেকালো। নীলাভ নয়নজুড়ে ছেঁয়ে আছে অপ্রাপ্তি। আমাদের আজ তৃতীয় বারের মতো চোখাচোখি হলো। বাড়িতে ঢোকার সময় একবার, মা যখন আমাকে তৃষ্ণার সাথে পরিচয় করালো তখন একবার, আর এই একবার। প্রতিবার নয়নে নয়নে সাক্ষাৎকার খুব একটা সময়ের ছিলো না। এবারের টা ছিলো।
তৃষ্ণা ওভাবেই তাকিয়ে রইলো। চোখ সরাইনি আমিও। তৃষ্ণা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বিড়বিড়িয়ে কিছু একটা বলছে, যা আমার শ্রবণ ইন্দ্রীয় অবধি পৌঁছচ্ছে না।
আরহান একবার আমার দিকে আর একবার তৃষ্ণার দিকে তাকালেন। আমার হাত ধরে হালকা হেসে বললেন,“দেরি হচ্ছে শুকতারা।”
আমি এতক্ষন তৃষ্ণার দিকে তাকিয়েছিলাম খেয়াল করিনি। আরহান একদিন ঠিকই বলেছিলেন, এই চোখের দিকে কেউ একবার তাকালে অন্য কিছুর খেয়াল থাকে না।
আমি আরহানের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললাম,“চলুন।”
সিঁড়ি বেয়ে নামতেই সেখানে দীপ্তি চলে এলো। আমাকে নিচে চলে আসতে দেখে প্রশ্ন ছুড়লো,“চলে এলে যে এখনই?”
“উই আর গেটিং লেট। নাও, উই হ্যাভ টু গো।” —কথাটি বলেই আমাকে নিয়ে মায়ের কাছে চলে এলেন।
__________________
আরহান ড্রাইভ করছেন। আমি উনার পাশে। গাড়িতে দুজনই আছি। রুদ্র নিজে যেই গাড়ি নিয়ে এসেছিলো, সেটায় করে আলাদা গিয়েছে। মায়ের কাছ থেকে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। অন্যদিকে তৃষ্ণা ছিলো বিধায় আরহান যতদ্রুত সম্ভব আমাকে নিয়ে এসেছেন। তৃষ্ণার সাথে আর দেখা হয়নি। ছাদ থেকে আসেইনি আর।
তৃষ্ণার জন্য আমার ভীষণ মায়া হয়। তার এতো খারাপ কাজের কথা শুনেও, আমি তাকে ঘৃণার চোখে দেখতে পারিনা। হয়তো তার মনেও ভালোবাসার উপলব্ধি রয়েছে বলেই, আমার তার প্রতি এমন অনুভূতি হয়।
শুনেছি একটা মেয়ে তার চোখেই বার বার হারিয়ে যায়, যার কাছে তার মনটাই হেরে বসে আছে। শুধু তারই চোখের মুগ্ধতায় ডুবে যায়। দিবা রাত্রি বিভোর হয়ে, একমাত্র তার চোখেই নিজের গোটা দুনিয়া দেখতে পায়।
সত্যি বলতে আমি তৃষ্ণার চোখে হারিয়ে গিয়েছিলাম। তবে এটা মুগ্ধতা নিয়ে নয়। তার চোখে আমি আকাশসম কষ্ট দেখতে পেয়েছি। সেই কষ্টের ছিটে ফোঁটা আমিও উপলব্ধি করতে পেরেছি। কীসের জোরে! জানা নেই।
আমার দৃষ্টি জানালার বাইরে। মৃদু হাওয়া বইছে। এসি অফ ও জানালার কাঁচ নামানো। একটা দিনে হুট করেই কতো কিছু ঘটে গেলো। শীতল বাতাস আমার চোখ মুখ ছুঁয়ে দিচ্ছে। আরো প্রবল ভাবে অনুভব করার জন্য চোখ বুঁজে ফেললাম।
মিনিট খানেক বাদে চোখ খুলে আরহানের দিকে তাকালাম। সর্বপ্রথম চোখ গিয়ে ঠেকলো আরহানের চোখে। ভালোবাসার মানুষটির চোখে হারিয়ে যাওয়াটা নাকি প্রচুর শান্তির। সেই লক্ষ্যে আমিও হারিয়ে যেতে উদ্যত হলাম। মিষ্টি হেসে তাকিয়ে রইলাম। নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে তার চোখের গভীরতায় হারিয়েই গেলাম।
বেশ খানিকক্ষণ বাদে কানে কারো কথা এলো। আরো একটু খেয়াল করতেই মস্তিষ্কে ধারণ করলাম এটা আরহানের কণ্ঠস্বর।
ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে সামনে দেখলাম আরহান স্টেয়ারিং এর উপর হাতের কনুই রেখে, সেই হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে আমারই দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি হকচকিয়ে উঠলাম। খানিকটা নড়ে চড়ে বসে বুঝলাম, গাড়িটা থেমে আছে। জিজ্ঞেস করলাম আরহানকে,“ওভাবে তাকিয়ে কী দেখছেন?”
“প্রিয় মানুষটির, প্রিয় অঙ্গের দিকে তাকিয়ে, এই অপ্রিয় আমিকে তার প্রিয় হিসেবে দেখছি।”
অবুঝ আমিটা কিছুটা সময় নিয়ে আরহানের এই কথাটা নিয়ে গবেষণা চালালাম।বুঝতে পেরে লাজুক হাসলাম আমি। তাতে আরহান তার অপর হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রেখে, ঠোঁটে হাসির রেখা প্রশস্ত করে বললেন,“এই হাসিতেই খুন হয়েছি।”
কিছু কিছু পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যেখানে লাজুক ভঙ্গিতে আর থাকা যায়না। পেট ফেটে হাসি চলে আসে। যেমনটা আমার এখন হচ্ছে। অতিরিক্ত লজ্জায় হাসি পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে হাসি থামানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করছি।
আরহান তা দেখে বললেন,“অনেকক্ষণ ধরে ডেকে চলেছিলাম তো! এখন কি এখানেই থাকবেন মহারানী? নাকি আমার রাজ্যে আপনার প্রবেশ হবে?”
আমি মুচকি হেসে বললাম, “ওহ্ হ্যাঁ! যেতে তো হবেই। চলুন।”
বাড়িতে প্রবেশ করতেই সামনে নিশাকে দেখতে পেলাম। নিশা আমাদের দেখে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলো,“এসে গিয়েছো তোমরা! ফ্রেশ হয়ে এসো, খাবার সার্ভ করছি আমি।”
আরহান জবাবে বললেন,“খেয়ে এসেছি আমরা।”
“ওহ্ আচ্ছা।”
আরহান জিজ্ঞেস করলেন,“তুমি খেয়েছো?”
নিশা, আরহানের করা প্রশ্নে চমকিত হলো। আরহান আগ বাড়িয়ে কথা বলেনা। আজ বলছে। মনে মনে নিশার খুশি যেনো উপচে পড়ছে।
মুচকি হেসে জবাব দিলো, “হ্যাঁ ভাইয়া। খেয়েছি।”
“মা? খেয়েছে?”
“হ্যাঁ ভাইয়া।”
“ঔষধ!”
“নিয়েছে ভাইয়া। টেনশন করো না, সব হয়েছে। মা এখন ঘুমোচ্ছে। অর্ধেক ঘুম, ঘুমিয়েও নিয়েছে হয়তো।”
শেষোক্ত কথাটি বলে নিশা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তাতে আরহানও মুচকি হাসলো। আরহানকে কখনোই এভাবে কথা বলতে দেখিনি কারো সাথে। আজ যে নিশার সত্যি খুব খুশি লাগছে। তা ওর চোখের কার্নিশ ঘেঁষে দৃশ্যমান অশ্রুকণা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
_____________________
রাতের মধ্যভাগ। ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল আজ। আরহান শাওয়ার নিচ্ছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও ঘুমনোর আগে উনি শাওয়ার নেন। তবে একটা জিনিসে আমি সত্যিই বিস্মিত হই, একটা ছেলের শাওয়ার নিতে এতো সময় লাগে!
আরহানের সাথে কাটানো সব সময়গুলো নিয়ে ভাবছি। উনার সাথে এখনও আমার কোনো খারাপ স্মৃতি তৈরি হয়নি। যা হয়েছে সবটাই অসম্ভব ভালোলাগার এবং সাথে রয়েছে অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা।
মুচকি হাসলাম। চেঞ্জ করার উদ্দেশ্যে কাবার্ডের নিকট এলাম। কাবার্ড খুলে একটা একটা করে শাড়ি দেখে যাচ্ছি। কোনটা পরবো?
এমন সময় এক কোনা থেকে সাদা রঙের কিছু একটা নিচে পড়লো। আরহানের কোনো কিছুই আমি ধরিনা। আমার মতে সবারই ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার গুলো থেকেই থাকে, সেগুলোতে আমাদের ঢোকা উচিত নয়। সম্মুখে পড়ায় নিচু হয়ে হাতে তুলতেই খেয়াল করলাম, আরহানের টিশার্ট এটা।
শুভ্র রঙ্গা টিশার্টটা মুচকি হেসে বুকে জড়িয়ে নিলাম। এতে আরহানের শরীরের ঘ্রাণ মিশে আছে। হুট করেই একটা কোনায় আমার দৃষ্টি ঠেকলো। লক্ষ্য করলাম সেই কোনায় রেশম সুতোয় ছোট্ট করে অ্যালফাবেট ‘A’ লেখা।
কিছু সময় এমন হয়, যখন মনে হয় এই জিনিসটা, একই ভাবে আমার সাথে এর আগেও ঘটেছে। তখন অনেক মনে করার চেষ্টা করেও মনে আসে না
।
হুট করেই মস্তিষ্কে সেই দিনের কথা চলে এলো। সেই খুন! হিংস্রতা! রক্ত! সব মনে পড়তেই বিস্ময়ে, শঙ্কায় হতবিহ্বল অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইলাম। হাতে এখনও আরহানের টি শার্ট।
আরহান! নাহ্! আরহান হতে পারে না। একই রকমের ডিজাইন অনেক কিছুতেই হতে পারে। তাও, মস্তিষ্কে ধরতে পারছি না কিছুই। ভাবনা সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
তখনই ওয়াশরুম থেকে বেরোলেন আরহান। আমাকে নীরস ভঙ্গিতে মাথা নত হয়ে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলেন।
আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই আমি মাথা উঁচু করে তাকালাম। আমার মুখে কোনো ত্রাস, ক্রোধ, গাম্ভীর্য, অভিমান, অভিযোগ কিছুই নেই।
হাতের টিশার্ট এগিয়ে বললাম,“এটা আপনার?”
“হ্যাঁ।”
“এই ডিজাইন?” —লাল রঙ্গা সুতোয় লেখা ‘A’ কে উদ্দেশ্য করে বললাম।
আরহান মৃদু হেসে বললেন,“আরে এটা! এই লোগো তো আমার আগের বেশির ভাগ হোয়াইট ফেব্রিকেই ছিলো। আমার অফিসের প্রিভিয়াস লোগো ছিলো এটা।”
“এরকম লোগো আর কারো কাছে থাকতে পারে?”
“একদমই না।”
আমার মাথা ঘুরে এলো। হাত থেকে টিশার্ট পড়ে গেলো। অবিশ্বাস্য নয়নে আরহানের দিকে তাকালাম। আরহান আমার এমন অবস্থার কারণ বুঝতে পারছেন না। এগিয়ে এলেন আমার দিকে।
আমি দৃষ্টি সরালাম। নিজের মনকে বুঝ দিচ্ছি, সেদিন সেই খুন অন্য কেউ করেছে হয়তো। হয়তো কোনো ভাবে আরহানের হ্যাঙ্কি সেই রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এই সকল কিছু আমার কাছে কাকতালীয় ঠেকছে না।
সব ভুলে সেই ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য যখনই উদ্যত হলাম, তখনই আরহান আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,“আমাকে বিশ্বাস করো?”
আরহানের চোখের মাঝে আমার দৃষ্টি স্থির রইলো। যে কাউকে হিপনোটাইজ করতে সক্ষম। আমিও হয়ে গেলাম। নজর আরহানের নয়ন জোড়াতেই সীমাবদ্ধ রেখে বললাম,“নিঃসন্দেহে।”
আরহান পুনরায় প্রশ্ন করলেন,“আমাকে কতটা বিশ্বাস করো?”
মস্তিষ্কে প্রথম যেই উত্তরটা ছিলো সেটা বললাম, “যতটা বিশ্বাস করলে চোখ বন্ধ করে পুরোটা জীবন সেই একজনের কথা মতোই চলা যায়।”
আরহান হাসলেন। সেই দিনের মতো আবারও বললেন,“এই বিশ্বাসটাই রেখো।”
কথাটি শেষ করতেই লোড শেডিং হয়ে গেলো। চারিপাশে অন্ধকার। বাহিরের ল্যাম্পপোস্টের আলো আসছে। তবে তার দরুন কেবল এই অন্ধকারের গভীরতা বোঝা যাচ্ছে। আরহান আমার হাত ধরে ব্যালকনির দিকে অগ্রসর হলেন। আমার যেনো কী হলো! আমিও বিনা কথায় উনার পিছু পিছু ব্যালকনিতে গেলাম।
ব্যালকনির গ্রিলের উপর এক হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি। আমার ঠিক পাশেই আরহান। চারিপাশে শীতল বাতাস বইছে। কিছুক্ষণ আগের সেই ভয়ের রেশ মাত্র নেই। হুট করেই এক দমকা হাওয়া সাথে করে কিছু বারিধারা নিয়ে আগমন ঘটালো। সব ভুলে এই বর্ষণের রাতে প্রকৃতি বিলাসে মত্ত হয়েছি দুজন। ঘুম যেনো আমাদের দুজনের চোখের জন্য নিষিদ্ধ এক বস্তু হয়ে গিয়েছে।
বৃষ্টির ছিটে আমার চোখ মুখ ছুঁয়ে দিচ্ছে। এতক্ষণ বাইরে তাকালেও আরহানকে দেখতে চাওয়ার ইচ্ছেতে উনার দিকে মুখ ফিরালাম। চোখাচোখি হয়ে গেলো। উনিও আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। নেশাক্ত নয়ন তার। অধর কোণে নেই কোনো হাসি। বড্ড গম্ভীর তার মুখশ্রী। তা দেখেই আমার বুকটা ধুক করে উঠলো। নিস্তেজ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। হয়তো কিছু অনর্থ ঘটানোর জন্যই এই ধারার পতন।
আবেদনময়ী এই প্রকৃতিতে আরহানের নেশাক্ত নয়ন জোড়া আমার হৃদ যন্ত্রের অসুস্থ হয়ে যাবার মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়ালো। স্থির আরহান হুট করেই তার পা জোড়া গতিশীল করে আমার দিকে এগোলেন। মাঝে ইঞ্চির গ্যাপ রেখে থেমে গেলেন। শ্বাস গুলো মিলে যেনো এক হয়ে যাচ্ছে। হয়তো এক হবার সময় এসেই গিয়েছে।
ডান হাত এগিয়ে আমার বা পাশের এক গাছি চুল কানের পিঠে গুঁজে দিলেন। অধরযুগল কানের নিকটবর্তী রেখে ফিসফিসিয়ে বললেন,“ভালোবাসো?”
আরহানের ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ, ‘ভালোবাসো?’ প্রশ্নটি করার সময় বারবার আমার কানে এসে লাগছিলো। সমগ্র শরীরে অদ্ভুত, অচেনা, ভালোলাগার এক শিহরণ ছেয়ে গেলো। চেয়েও কিছু বলতে পারছি না। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা আমার। ঝড় যেমন বাইরে বইছে, তেমনই আমার অন্তরেও। অশান্ত এই মনটা যেনো এখনই তার কাঙ্খিত কিছুর সান্নিধ্য পেতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। লাজুক ও ভীরু মুখশ্রী নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
আমাকে নিশ্চুপ দেখে আরহান সরে গেলেন। নিজের সামনে উনার অনুপস্থিতির আভাস পেয়ে চট করে চোখ খুললাম। আরহান মৃদু কন্ঠে,“আমি বেশি করে ফেলছি হয়তো” বলেই চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন।
দ্রুত উনার হাত ধরে ফেললাম। আরহান আমার দিকে তাকাতেই আমি কম্পনরত অধর যুগল দ্বারা অতীব কষ্টে উচ্চারণ করলাম এই মধুর শব্দটি, “ভ’ভালো.. ভালোবাসি।”
“সত্যি?”
আরহানকে আজ বাধা দেবার ক্ষমতা আমার নেই। মাথা নিচু করে লাজুক হাসলাম। আরহান উনার জবাব পেয়ে এগিয়ে এলেন। আমার দুই গালে নিজের হাত এলিয়ে দিয়ে আমার মুখখানা নিজের দিকে তুলে ধরলেন। আমার নয়ন জোড়াকে নিজের গহীন দৃষ্টিতে প্রতীয়মান অনল দ্বারা ভস্ম করে বললেন,“নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসি তোমায় শুকতারা।”
দূরত্ব ঘুচিয়ে আমার সবচেয়ে কাছে চলে এলেন। ওষ্ঠের সাথে ওষ্ঠ মিলিত হলো। সময় যেনো থমকে গেলো। হৃদয়ের অন্তঃস্থলের ঘূর্ণিঝড়টি নিমিষেই বারিধারায় পরিণত হলো। অতঃপর আরহান আমাকে পাজো কোলে নিয়ে আলগোছে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে প্রবেশ করলেন।
আজ বাঁধা দেবার কেউ নেই। প্রকৃতিও আজ চাচ্ছে যেনো এমনটাই হয়। বৃষ্টির তেজ বাড়ছে তো বাড়ছেই। রুমের ভেতরেও দুজন ভালোবাসার মানুষ ভিজতে চলেছে এক বৃষ্টিতে। সমগ্র প্রকৃতি সাক্ষী রইলো। আজ দুজন ভালোবাসার মানুষ এক হতে যাচ্ছে। এক সুখময় বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছে।
চলবে…