August 26, 2022

আমার প্রিয় ডাইরি

by Nadia Sinha in STORY0 Comments

[আমার এবং আমার ডাইরির অনুভূতি কথন]
প্রায় বহুদিন হলো আমার প্রিয় ডাইরিটা হাতে নেই না। তাতে পরম আবেশে হাত বুলাই না, তাতে নিজের সুপ্ত অনুভূতির, আবেগময় ভালোবাসা প্রকাশ করা হয় না। অনলাইন যুগ তো তাই আর ডাইরিটা কে সময়ই দেয়া হয় না। টেবিলে বসেছি। হঠাৎ ডাইরির পানে দৃষ্টি জোড়া আবদ্ধ হয়। মনে হলো কত অভিযোগই না করছে সে আমায় নিয়ে। বারংবার মন বলছে ডাইরিটা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চাপা অভিমানে অভিযোগ তুলছে,
-“আমায় ভুলে গেছিস তুই। তাই না? খুব ঠুনকো হয়ে গেছি তোর কাছে? যে আমাকে তুই এত ভালোবাসাতি। তাকে আজ ছোঁয়া তো দূর একবার চোখ তুলে দেখছিসও না। হ্যাঁ রে! তোর যান্ত্রিক জীবনটা কি আমার থেকেও সুখময়, আনন্দময়? তো যান্ত্রিক জগতের মানুষ গুলো কি বুঝে তোর অনুভূতি? আমার মত করে? যে আমিটা কে মূহুর্তে মূহুর্তে জড়িয়ে ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতি, প্রাপ্তির এক তৃপ্তিময় প্রশান্তি নিয়ে কলিজায় জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরতি। যার গায়ে কলমের আঁচড় না তুললে তোর মনে ঝড়েরা তান্ডব করতো। তার দিকে আজ ফিরেও তাকাস না। খুব ঠুনকো হয়ে গেছি না রে তোর যান্ত্রিক জীবনে?

টেবিলের এক কোনে এলেমেলো বই-খাতার ভিড়ে অবহেলায় পরে আছে আমার প্রিয় ডাইরি। আমার লেখনীর প্রথম ধাপ। সেই ডাইরিটাই আজ অবহেলিত। তাও আমার কাছে।

ধুলোবালির এক বিস্তর আস্তরে ঢেকে গেছে। এক সময় ডাইরিটা আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলো আজ সে আমার সঙ্গে আড়ি করে ধুলো-বালিকেই প্রিয় বন্ধু করে নিয়েছে। এক সময় যে ডাইরিটা বুকে জড়িয়ে, দুবাহু দিয়ে আঁকড়ে ধরে বসো থাকতাম, মিট মিট করে হাসতাম, কল্পনা জল্পনা করতাম হাজার কবিতা উপন্যাসের। তাকে আজ জড়িয়ে জাপ্টে আছে ধুলোবালি। আচ্ছা! আমি যে তাকে ছুই না, তার গায়ে কল্পনার জাল বুনি না সে কি রাগ করেছে আমর উপর? হয়তো করেছে। করবে নাই বা কেনো? তাকে যে আমি অবহেলা করে ফেলে দিয়েছি ধুলোবালিময় দুনিয়ায়।

আচ্ছা! ডাইরি তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস? নাকি অভিমান? তোর রাগ, অভিমান কি করে ভাঙ্গাই বলতো? ভাবিস না তোকে ভুলে গেছি। তুই ছাড়া আমার চলে নাকি বল? তুই-ই তো আমাকে নিয়ে এসেছিলি তোর রাজ্যে। তোর রাজ্যের নেশায় পরে গেছি রে। তোকে কি করে ভুলি বলতো? ব্যস্ততায় তোর গায়ে কলমের আঁচড় তোলা হয় না। তোর সাথে আমার আবেগ, অনুভূতির ভাব প্রকাশ করা হয় না। তাই বলে তুই রাগ করিস না। তুই নিজেই তো হাজার বাস্তবতার সাক্ষী। এমন কেউ আছে রে যে তোর সাথে নিজ অনুভূতি প্রকাশ করে না? এই যে আমাকে দেখ। কত আবেগ, কত অনুভূতি, কত দুঃখ, কত সুখ, কত আনন্দ, কত স্বপ্ন সব! সব তোর সাথে ভাগ করি। তাও কি তুই তোর অভিমান নিয়ে থাকবি? তুই তো আমার প্রিয় ডাইরি। আমার অনুভূতির আস্ত এক ভান্ডার। আমার ভালোবাসাময় আবেগ। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। জানি তুই আমার উপর রাগ করতেই পারিস না। হ্যাঁ! অভিমান করেছিস তো? তা আমি জানি। তোর মনে যে আমার জন্য অভিমানের পাহাড় বেঁধেছিস তাও আমি জানি।

তোর কাছে তো আমি খোলা পাতা, বিস্তর তারাময় আকাশ। তুই তো আমার অনুভূতির অন্তরাল। তাও কি অভিমান করে থাকবি? তুই না আমার প্রিয় ডাইরি, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমার অনুভূতির অন্তরাল।

জানি তো কি ভাবছিস। তুই কথা বলতে পারিস না, আমার মত নিজ অনুভূতি গুলোও কলমের আঁচড়ে আমার অন্তরালে প্রকাশ করতে পারিস না। তাই বলে তোর অভিযোগ আমি বুঝবো না? তা বলে কি তোকে অবহেলা রেখেছি? তোর অভিমান, অভিযোগ, অনূভুতি বুঝি না ভেবেছিস? কি করে পারলি? এমনটা ভাবতে? আমি তোর গায়ে অনুভূতি প্রকাশ করি তাই তুই আমার সকল অনুভূতি সঙ্গে পরিচিত। তুই প্রকাশ করতে পারিস না বলে কি আমিও বুঝবো না। বল? তুই যেমন আমার অনুভূতি গুলে বুঝিস, অনুভব করিস। ঠিক তেমনি আমিও তোর সকল অনুভূতি অনুভব করতে পারি। কারন তুই যে আমার প্রিয় ডাইরি।

About

Nadia Sinha

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}