লাবন্য ভীষণ লক্ষি মেয়ে৷ সে জেঠিমার কথায় ফিরে যাচ্ছিলো, এমন সময় সে বিড়ালটা খুব জোরে মেয়াও বলে একটা চিতকার করে উঠলো। সে ভাবছে কি করবে। আবার পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে গাছ থেকে ধুম করে ভারি কালো কি যেন একটা কিছু পড়ে গেলো৷ সে ভেবেছে বিড়ালটা পড়ে গেছে৷ সে যেই না দৌড়ে যাবে, এমন সময় তার ফুফাতো বোন লাইলী লাবন্য আপু লাবন্য আপু বলে তাকে হাত ধরে টেনে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো৷ তার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো৷ সন্ধ্যায় সবাই মিলে ক্যারাম খেলবে বলে লাবন্য নতুন ক্যারামবোর্ড আনিয়েছে, গ্রুপ গ্রুপ করে কতো কি খেলার আয়োজন। কিন্তু সে আর খেলায় মন দিতে পারছে না৷

যখনই সে দাদার বাড়ী আসে সে সবাইকে মাতিয়ে রাখে৷ বড় জেঠা-জেঠি, দাদা-দাদু, চাচা-চাচী, দুই ফুফা-ফুফু সবার আদরের৷ বছরে একবার করে ডিসেম্বর মাসে তারা সবাই বাড়ী আসে৷ অনেক হই হুল্লোড় করে। বাড়ীটাকে মাতিয়ে রাখে৷

রাত ৯ টার দিকে তার প্রচন্ড জ্বর সহ মাথা ব্যাথা শুরু হলো৷ তারপর শুরু হলো অসহ্য পেট ব্যাথা৷ ঠোঁট মুখ নীল হয়ে আসছে৷ সবাই লাবন্যকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ রাত ১২ টার দিকে শুরু হলো রক্ত বমি৷ বেশ কিছুক্ষন রক্তবমি করে লাবন্য ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো৷ সবাই গিয়ে শুয়ে পড়লো৷ কিন্তু লাবন্যের মা (সুরাইয়া) আর দাদু (লাভলী বেগম) ওর পাশে বসে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছে৷

এদিকে বাইরে একটা বিড়াল খুব চিতকার করছে৷ লাবন্যের দাদু জানালার পাশ থেকে লাঠি নিয়ে বিড়ালটাকে মারবে বলে যেই মাত্র জানালাটা খুললো,শনশন করে বাতাসের সাথে সেই কালো বিড়ালটা লাফ দিয়ে লাবন্যর গায়ে এসে পড়লো৷ বিড়ালটা লাবন্যের গায়ের উপর উঠে তার চুলে কি যেন খুঁজছে৷ বিড়ালটা ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘর প্রচন্ড গন্ধে ভরে গেলো৷ সে গন্ধে সুস্থ্য মানুষের শ্বাস নেয়া অসম্ভব৷ বিড়ালের এ অবস্থা দেখে লাবন্যের দাদু অনেক ভাবে চেষ্টা করছে বিড়ালটাকে সরাতে লাবন্যের কাছ থেকে৷ এরই মধ্যে লাবন্যের ঘুম ভেঙে গেলো৷ সে বিড়ালটাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো৷ সে চেষ্টা করলো বিড়ালটাকে কোলে নিতে৷ কিন্তু কোনো ভাবেই পারছিলো না৷ বিড়ালটা শুধু ছুটোছূটি করছে, আর বারবার লাবন্যের চুলের উপর লাফ দিয়ে দিয়ে উঠছে৷ কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না৷ এবার বিড়ালটা লাবন্যের হাতে তার নখের আঁচড় দিলো৷ সেখান থেকে চিরচির করে রক্ত বের হতে লাগলো৷ বিড়ালটা নাক দিয়ে শুঁকে জিভ দিয়ে সে রক্তগুলো চেটে নিলো৷ সুরাইয়া এবং লাভলী বেগম কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কি করবেন তারা৷ লাঠি দিয়েও মারতে পারছিলেন না কারন লাবন্যের গায়ে বাড়ি পড়বে৷ এদিকে বিড়ালের আঁচড় খেয়ে এবার লাবন্য একটু খেপেই গেলো বিড়ালটার উপর৷ সে হাত দিয়ে অনেক কষ্টে ধরে বিড়ালটকে ছুড়ে মারলো জানালার দিকে৷ বিড়ালটা ছিলো অনেক ভারী৷ বুদ্ধি করে লাভলী বেগম বিড়ালটাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে জানালা বন্ধ করতে গিয়েই বিড়ালের লেজ জানালার চিপায় আটকা পড়ে যায়৷ আর বিড়ালটা অনেক জোরে চিতকার করতে থাকে৷ লাভলী বেগম কোনো ভাবেই জানালা আর খুলছেন না৷ বিড়ালের চিতকারে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে গেলো৷ সবাই দৌড়ে আসলো কি হয়েছে তা দেখতে৷ রুমে ঢুকে প্রথমে গন্ধে সবাই নাক চেপে ধরলো৷ লাবন্যের বাবা নোমান সাহেব এসে জানালাটা একটুখানি ফাঁকা করে বিড়ালের লেজটা কোনোভাবে বের করেই জোরে টান দিয়ে ছিটকিনি আটকে দিলো৷ কিন্তু বিড়ালের লেজে কেমন যেন একটা ধারালো জিনিষ ছিলো যা দিয়ে নোমান সাহেবের হাত কেটে চিরচির করে রক্ত বের হতে লাগলো৷

চলবে…

About

Zeenat Alam

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}