কদিন থেকে শরীরটা ভীষণ খারাপ। কেমোর প্রথম ডোজ শরীরে পুষ করা হয়েছে। মাথা ঘুরাচ্ছে, বমি বমি লাগছে। ভীষণ ক্ষুধা পাচ্ছে কিন্তু খেতে পাচ্ছি না। মাছ-গোশত সব কিছুই কেমন ঘেন্না ঘেন্না লাগছে। কাল রাতে ডাল ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি যদিও পরিমাণে অল্প। জিহব্বায় ঘা আছে ঝাল খাওয়া যাবে না। সন্ধ্যায় প্রিঙ্গেল চিপস আর কাজু বাদাম এনে রেখেছিলাম । গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে খিদে পেলে যাতে খেতে পারি ভোর বেলা উঠে সেসবই খেলাম।

আমার ছেলে-মেয়ে আমার ভীষণ যত্ন করছে পালাক্রমে দুজনেই পাশে থাকছে। মায়ের কি লাগবে না লাগবে জানতে চাইছে, ঠিকমত ওষুধ খাওয়াচ্ছে। মায়ের অসুখে দুজনেই ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়ে ছুটে এসেছে। এই পাওয়াটাই বা কম কিসে !

ইদানীং কালের অনেক দম্পতী যুগলই বাচ্চা জন্ম দেওয়াকে ঝামেলা মনে করেন। কিন্তু বাচ্চা বা সন্তান মানেই নরম কোমল অনুভূতি ।

আমার ভাইয়েরাও আমার পাশে থাকছেন, এতো ব্যস্ততার মাঝে সময় দিচ্ছেন, আমার যত্ন নিচ্ছেন।আম্মা সবসময় বলতেন তোমার একটা বোন নেই কিন্তু আমি ভাবছে বোন থাকলেও কি ভাইদের মত এতো যত্ন নিতে পারতেন।
যারা একটি সন্তান নিচ্ছেন তাঁদের জন্য আমার আজকের অবস্থা বিবেচনায় পুনঃবার ভেবে দেখার অনুরোধ থাকবে।

চিকিৎসার প্রটোকল গুলো ডাক্তারদের বোর্ডেই সেদিন ঠিক হয়েছিল। পেট সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট আসার পর কাজী মুস্তাক ভাইকে ফোন দিয়ে প্রথম জানালাম। মুস্তাক ভাই বললেন একটু সাইদ স্যারকে জানানো দরকার। ডাঃ সাইদ ভাইকে জানানোর পর বললেন এখনই কেমো শুরু করো ৩০ দিন পার হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর আহমেদ ক্যান্সার হাসপাতালে কেমো শুরু।

শরীর কাঁপছে ঠিক মত বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। একটু একটু করে লিখছি। ডাবের পানি খাচ্ছি। জীবনে সবসময় সবক্ষেত্রে মানুষটা গুরুত্বপূর্ণ পারিপার্শ্বিক বাহুল্য নয়। টিংকুর সমস্ত কেমো মুস্তাক ভাই দিয়েছেন ভীষণ যত্নে। কিন্তু মুস্তাক ভাই কিছুতেই আমার কাছ থেকে টাকা নিবেন না । এতো বড় একজন ডাক্তার এতো এতো দায়িত্ব। বার বার একজন মানুষকে দিয়ে এতো কষ্ট কি করে করাই।

তা ছাড়া ভিড়ে আমার ভয়। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস নারী দুই ডাক্তার আমাকে ২ মিনিট সময় বেশী দিতে পারলে ৫ বছর আগেই ডিসিশন দিতেন অপারেশনের। কেমোর বিষে বিষাক্ত হতে হত না আর।

অনেকে মনে করেন ব্রেস্টে পেইন করলে বুঝি ভয়ের কিছু নেই কারণ বেশীরভাগ টিউমার নিভৃতে এসে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু আমার এই পেইন তো ২০০৪ সাল থেকেই। ভারতের নামকরা হাসপাতালে মেমোগ্রাফি, আলট্রা সাউন্ড সহ নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন সবকিছু স্বাভাবিক । প্রিমাভেরা আর ভিটামিন ই ক্যাপসুলের কম্বিনেশন ড্রাগ দিলেন। ২০১৭ -১৮ তে বাংলাদেশের দুই নারী ডাক্তারও একই ওষুধ দিলেন। আমি ধরেই নিলাম এটাই আমার জন্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

তা ছাড়া আমার দুই সন্তানই ব্রেস্ট ফিড বেবি। অনেকে মনে করেন সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে যায়। ৯৪ এর জুলাই মাসে প্রথম সন্তান ২০০১ এ দ্বিতীয় সন্তান। সেই সময়টাতে শিশুদের জন্য মায়ের বুকের দুধের ব্যাংক ছিল না। এখন আছে শুনেছি। নিঃসন্দেহে এটা একটা মহতী উদ্যোগ। কত বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ পায় না। আর কত মায়েদের উপচে পরা বুকের দুধ ফেলে দিতে হয়। আহারে কি অপচয় !

মায়ের দুধ ব্যাংকে কি ভাবে দুধ সংগ্রহ করা হয় জানা নেই। কারণ মায়েদের পক্ষে দুধ সংগ্রহ করে পৌঁছে দেওয়া সহজ সাধ্য নয়।

চলবে…

About

Khugesta Nur E Naharin

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}