দ্বিতীয় সন্তান তাও আবার মেয়ের পরে পরে আমি ও একজন মেয়ে হয়ে আসলাম এ পরিবারে। বাবা মায়ের স্কুলে ভর্তি করায় বিশেষ আশা ছিল। স্কুল হতে হবে সেরাটি। রাজশাহীর মিশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। লন্ডনের অধিনে ছিল স্কুলটি। শিশু ক্লাস থেকে দশম ক্লাস। এগারোটি শ্রেনীর স্কুলএ পড়তে কখনো খারাপ লেগেছে বলতে হলে ভাবতে হবে। বাবা সরকারি চাকরি করতেন – হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা। মা গৃহিনী হলেও সব দিকে চৌকস ছিলেন আমাদের মা। আমরা পরে তিন বোন হলাম। তখন ছোট্ট বোনটিকে রেখে স্কুলে যেতে একটু কষ্টই হতো। নাদুস নুদুস বড়সড় বোনটি আমার।

স্কুলে যাওয়া শুরু হলো আর বিড়ম্বনা ও পিছু নিল।একটু একটু সমস্যা শুরু হলো – আমার বড় বোনটি দেখতে বেশ সুন্দর হওয়ায় আশেপাশে চলতি রাস্তায় ওকে ছেলেরা ক্লাস ফাইভ হতে জ্বালাতন শুরু করলো। বোনের সাথে যাওয়া আসা করতাম। আপাকে ওরা টিপ্পনী কেটে কথা বলতো এটা আমার খারাপ লাগতো। আমাকেও ছাড় দিত না ঐ পাজি ছেলেরা। রইলাম আশে পাশে খেলাধুলা সব বাদদিয়ে গৃহবন্দী হয়ে। এমন এক সময় ঘনিয়ে আসলো আমরা নানা বাড়িতে বেশি থাকা শুরু করলাম। একটা স্বপ্ন দেখতাম আমি চাকরি করবো তা হবে কলেজে অধ্যাপনান।

স্কুল জীবনে কখনো বাইরে বলতে আত্বীয় স্বজন ছাড়া অন্য কোথাও যাবার সাহস ছিলনা। কোথাও গেলে আব্বার সংগে। তিন কন্যার বাবার দায়িত্ব অনেক ছিল। আমরা ছাড়া ও তো তাদের আরও দায়িত্ব কিছু পালন করতে হতো! তাই চাইলেও সব শখ আহ্লাদ পূরণ হতোনা স্বাভাবিক ভাবেই। তবে মামা খালাদের সাথে আমাদের কিছু বাড়তি পাওয়া জড়িত ছিল। উনাদের সাথে বেড়ানো ঘোরাঘুরি হতো।

প্রাইভেট পড়ে বাসায় আসা ছিল আতংক। এরপর এস.এস.সি পাশ করে কলেজে ভর্তি হই। রাজশাহী গভঃমেন্ট কলেজ এ। স্কুলের জন্য খুব মন কাঁদত কারণ বয়েজ কলেজে চিল্লা চিল্লি আমার ভালোলাগতো না। এরপর এগারোটা বা জলেই মিছিল স্লোগান এটা একটা ভয়ংকর মনে হতো। এস.এস সির সময়টি আমার মামার বাসায় থাকতাম কলেজ পাশে ছিল। যাওয়া আসার কোন সমস্যা হতোনা আমার। এভাবে শুরু হয়ে গেলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। রাজশাহী ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ -শহিদুল্লাহ কলা ভবন। একমাস ক্লাস করিনি ইতিহাস পড়বোনা তাই। পরে সবাইকে দিয়ে আমাকে বোঝানো হলো। আমি বিতর্কে না জড়িয়ে ক্লাস শুরু করলাম। একমাস ক্লাস না করার ঔষধ পেলাম। কোন অবস্থান হলোনা আমার। মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে বৃত্তি পেলাম। অনার্স শেষ হতেই আমি বুঝে গেলাম আমার রাজশাহী তে থাকতে ও চাকরি করতে করতে হবে। সরকারি চাকরি করলে বদলির একটা ব্যাপার থাকবে। তাই পাশ করেই ঢুকে গেলাম কলেজে । চাকরি সংসার শুরু হলো । রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাস এ থাকতাম কর্তার চাকরির কারণে। এরপর ২৮ বছর কেটে গেলো ২টি পুত্র সন্তান আমার। ১ম জন কম্পিটার সায়েন্স ইন্জিনিয়ারিংএ পাশ করেছে আর ছোটটি এবার এ্যাডমিশন দিবে। আমার আর পাঁচ বছর চাকরি আছে। একটি কথা না বল্লেই নয় যে সংসার শুরু হয়েছিল ২জন ননদ কলেজ পড়ুয়াদের নিয়ে। আমি নিজেই রান্মা করতাম। ভালোবেসেই করতাম। আলহামদুলিল্লাহ ননদের বিয়ে ও বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত আমি তাদের পাশে ছিলাম। ২০০৬ সালে শ্বশুর ও ২০১৭ সালে বাবাকে হারাই। এখন মায়েরা আছেন। দোয়া করবেন আপনারা আমাদের মায়েদের জন্য।

মাহবুবা ইয়াসমিন
৭ই মার্চ, ২০২২ইং

About

মাহবুবা ইয়াসমিন

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}