প্রিয় কবি,

প্রতি রাতেই তোমার কথা ভাবি,তোমার কবিতা পড়ি,এখন আমার ঢের সময় জানো! তোমার কবিতা পড়লে মন চলে যায় অচেনা ভুবনে। আমি ও তোমার কবিতার আলপথ ধরে হেঁটে হেঁটে যাই যেনো শেষ বিন্দু তে।
তখন তুমি হয়তো অন্য কোন নতুন কবিতা লিখতে ডুব দিয়েছো শব্দের সমুদ্রে। লিখছো চমৎকার কবিতা, নির্বাচন করছো চমৎকার সব শব্দ,কলমের চাকু চালিয়ে শব্দ কাটছো আবার ও চিন্তা করছো আশ্চর্য সব শব্দ পুঁতির মতো বসালে সবচেয়ে সুন্দর হবে কবিতা।

একটা ছোট্ট ভাত -শালিক তোমার কবিতায় রোজ ঝিমোয়। একটা গংগা ফরিং পুকুর ধারে হিজল গাছে বসে থাকে উদাস হয়ে। বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঝরে পড়ে সেই অভিমানী হিজল ফুল। চীলের ডানা থেকে খসে পড়ে নরম পালক তোমার কবিতায়।

আমিও যেনো ছুঁটে যাই সেই লাল ফরিংটাকে ধরতে।আর ভাত- শালিক গুলোকে আমি রোজ ভাত ছিটিয়ে দেই কবিতার উঠোনে।অথচ তুমি তা জানই না!

তোমার কবিতার কচি দুঃখ গুলো আছড়ে পড়ে বৃষ্টি র মতোই। মাঝে মধ্যে সমুদ্রের ঢেউ এর মতোন ভাসিয়ে নিয়ে যায় চিকন দুঃখ গুলো। বেদনা দিয়ে তুমি সৃষ্টি করো সুখ-কবিতা। পাঠক পড়ে আনন্দ লাভ করে,অথচ তুমি দেখো— তোমার বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা করে,তেমনি আমারও।

তুমি জানই না আমি তোমার পাশে থাকি যখন তুমি কবিতা লিখ।তোমার কফি খেতে ইচ্ছে করে কবিতা লিখার ফাঁকে। আমি ঠিক ই তোমার কফির মগ এগিয়ে দেই কবিতার শব্দে। তোমার আমার কফির মগে টুংটাং ঝর উঠে!

চোখ বন্ধ করে তুমি অনায়াসে চলে যাও ভুবন,ডাঙার সেই সজল নদীর কাছে। তোমার কবিতায় একটা জারুল গাছের ডালে বাসা বেঁধেছে ছোট্ট টুনটুনি। সারাক্ষণ ঘুঘু ডাকে অলস ভঙ্গিতে।

আচ্ছা কবি তোমার কি মনে পড়ে আমি আর তুমি ভুবন ডাঙার সজল নদীর তীরে ঘাস ফরিং এর পিছু ছুটতাম। তুমি আমাকে একটা ঘাস ফরিং ধরে দেয়ার,জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে।

প্রিয় কবি, তোমার কবিতা একবার পড়লেই মনে গেঁথে যায়,আতস্থ করা যায়। কি আশ্চর্য আমি কি তোমাকেই ভালবাসি না তোমার কবিতা! নিশ্চয়ই দুটোই, তোমার সঙ্গে কবিতার এক গভীর সংযোগ। তোমাকে ভালবাসি বলেই তোমার কবিতা এতো প্রিয়। তোমার কবিতা আত্মা কে পুষ্ট করে যেনো!

মাঝে মাঝে ই মনে হয় যদি কোন এক শুক্লপক্ষে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গেলো,তুমি ও ভিষণ রকম অবাক হলে। পেছনে ফেলে আসা শৈশব, স্মৃতিরা ঘাস ফরিং , গংগা ফরিং, ভূবণ ডাঙার সজল নদী তোমাকে আমাকে,নিয়ে গেলো টেনে টেনে।

তখন আমি বললাম,প্রিয় কবি তোমার কবিতায় যে জোনাকি জ্বলে তার পাশে আমাকে ও রেখো। না হয় ছোট্ট একটা ঘাস ফুল হয়েই থাকি!

আচ্ছা তোমার কি মনে পড়ে কবি,সজল নদীর তীরে… আমি ঠাম্মার পুরোনো কাঁচের বৈয়ম থেকে তোমার জন্য তিলের নাড়ু আর নারকেলের বরফি নিয়ে তোমার কাছে ছুঁটে যেতাম। তুমি তখন কবিতা লিখ আমার চোখের কোনে। তুমি বললে,
—-দেখো পুজা কি সুন্দর বুলবুলি পাখি। আমিও বলতাম,
—-হুম,দেখো তুমি একদিন বড় কবি হবে।তোমার ভাবুক মন এ সত্যি টা হবে।
আমরা কলকাতায় চলে যাব খুব শীঘ্র ই।তখন তুমি বলতে,
—-আমাকেও সঙ্গে নিস পুজা। তোকে ছাড়া আমার থাকতে কস্ট হবে!
আমি বলতাম,
—– আমার সঙ্গে কি তোমার চলবে,আমি অন্য জাতের।
তুমি বলতে,
—আমি অত কিছু বুঝি না পুজা। তোর রক্ত আর আমার রক্ত এক রং লাল।
তখন তুমি তোমার হাত বাঁশের কন্চি দিয়ে কেটে রক্ত দেখালে।আর অল্প একটু রক্ত নিয়ে আমার কপালে টিপ দিয়ে দিলে। আমি সেদিন অনেক কেঁদে ছিলাম তোমার বুকে মুখ লুকিয়ে। হঠাৎ বড়দা এলো আর আমাকে মারলো। তুমি চিৎকার করে বললে,
—-পুজার কোন দোষ নেই বড়দা। ওকে আর মারবেন না।
তারপর এক,রাতে আমরা সবাই কলকাতা চলে গেলাম।

জান, এখন আর আমার কপালে টিপ নেই। সিঁথির সিঁদুর মুছে গেছে, সেই কবে। বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথাটা ক্রমশ বাড়ছেই। কি আশ্চর্য আমার ক্যানসার অথচ আমাকে জানানো হয়নি তখনো। অনেক পরে জানলাম। মৃত্যু কে আমি ভয়,পাই না কবি…

প্রিয় কবি, তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে ভিষন। কদিন থেকেই শরীর ভিষন খারাপ,অনেক গুলো ক্যামো নিয়েছি।কিছু খেতে ইচ্ছে করে না।মাথাটা প্রচন্ড ঝিম মেরে থাকে। আজকাল তেমন ঘুম হয় না। তখন তোমার কবিতা পড়ি ভিষন ভালো লাগে। মনে হয় আর একবার যদি ভুবন ডাঙার সজল নদীর ধারে বসে থাকতে পারতাম তোমার নরম হাতের স্পর্শ নিয়ে।

আচ্ছা তোমার কি মনে,পড়ে তোমার পুজার কথা!
আমি দাঁড়িয়ে আছি সেই সজল নদীর ধারে…
আর আমার চোখের পলক পড়ছে না তো পড়ছেই না
আমি দাঁড়িয়ে আছি তো দাঁড়িয়েই আছি,
তোমার প্রতিক্ষায় প্রিয় কবি..
পাশে সেই পুরোনো বট গাছ,মনে আছে তোমার!
সেদিন দুপুর বেলা বৃষ্টি হচ্ছিল….
তুমি এলে তারপর, তুমি আমি দাঁড়িয়ে আছি সজল নদীর ধারে,
বৃষ্টি এসে তোমাকে আমাকে ছুঁয়েছে।
জলে ভেসে গেলো তোমার আমার যত দুঃখ —
তোমার কি মনে আছে,তুমি একদিন বলেছিলে,
—পুজা যত দেরি ই হোক আমি তোর কাছে, ফিরে আসবো!

প্রিয় কবি, অনেক দিন ধরে আমার কথা গুলো জমে আছে। যেমন জমানো হয় কতগুলো দামী দিলরুবা পাথর, কতগুলো গোল্ড কয়েন। তোমার আমার শৈশবের সেই দিন গুলো এখন বুকের ভিতর এক চিঠির খামে,সে খাম চোখের জলের পুতি দিয়ে জড়ানো।

তোমার পুজা
শাহানা জেসমিন
১১/১০/২২

About

Shahana Jasmin

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}