নয়টি পরিবারের ( আমার পরিবার ছাড়া) প্রায় প্রতিটি পরিবার ই একাধিক বার কক্সবাজার দর্শনের অভিজ্ঞতা আছে।কারো কারো সেন্টমার্টিন ও।তবে তা হাতে গোনা। আমিও বিয়ের আগে, আমার হাসবেন্ডও বিয়ের আগে এবং বিয়ের পরে একাধিক বার বিভিন্ন দলের সাথে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কক্সবাজারে গেলেও আমার আর বাচ্চাদের কখনো যাওয়া হয়নি। সেন্টমার্টিন তো নয় ই।

তাই প্রথমে ঠিক করা হল কক্সবাজারে না থেকে সেন্টমার্টিন এই থাকার।চাঁদনি রাতে প্রবাল দ্বীপের মোহময়ী রূপ নাকি দেখবার মতো একটা ব্যাপার! কিন্তু বারো মুনির বার মতে শেষ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন এ রাত কাটানোর প্রস্তাব টা ধোঁপে টিকলো না।সিদ্ধান্ত হল দিনে গিয়ে দিনে ফেরার।

বাস কনফার্ম, কটেজ কনফার্ম। খাওয়া দাওয়া নিয়ে একটু সমস্যা হয়েও আবার সবাই একমতে পৌছলেন একসাথেই এবং সবাই মিলে একই খাবার খাওয়া হবে।

সব যখন ঠিকঠাক তখন প্রথম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলো আমার বাসায়। ২২/৩ এ সকালে আমার হাসবেন্ড চা খাওয়া শেষ করে ওয়াস রুমে যাচ্ছেন ফিরে এসে নাস্তা করবেন। এমন সময় ল্যান্ড ফোনে একটা কল এলে আমিই ধরলাম, উনাকে চাইছে উনি পিছন ফিরে জানতে চাইলে আমি ইশারা করে ধরিয়ে দিলাম। কল রিসিভ করেই নিমিষেই উনি পুরা ফ্যাকাশে হয়ে গেলেন।আর বারবার অনুনয় বিনয় করে তাদের কাছে মাফ চাইছেন। উনি মানসিক ভাবে খুবই নার্ভাস প্রকৃতির সাথে নির্ভেজাল মানুষ। হাইপার টেনসনের পেসেন্ট! ব্যাপার টা কি বুঝার জন্য আমি চট করে উনার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে রেখে দিই।উনার কাছে সামান্য শুনে বললাম এগুলো কেউ দুস্টামি করছে তুমি যাও ফ্রেস হয়ে এসে নাস্তা খেয়ে নাও।ফোন আসলে আমি ধরবো। উনি অনেক উৎকন্ঠা নিয়ে ওয়াস রুমে গেলেন!

কল এল, আমি ধরলে অপর প্রান্ত থেকে বল্লো ভাইজান কই।আমি বললাম উনি ওয়াস রুমে গেছেন। তারা বিশ্বাস করলো না বল্লো বেশি চালাকি করতে মানা কইরেন। আমি তখন ক্ষেপে গিয়ে বললাম আমরা নিরীহ মানুষ, কারো সাথে পাঁচে নাই আমাদের সাথে এমন করছেন কেন? আপনারা কি চান আর আপনারা কারা? আমাকে বকা দেয়া শুরু করলে আমি রেখে দিলাম।

উনি ওয়াস রুম থেকে বেরিয়ে ছোটো ছেলে খেলতে গিয়েছিল আর্টিলারি মাঠে তাকে ডেকে পাঠালেন। আবারও কল আসলে উনি ধরলে তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে দিলে উনি প্রায় কান্না শুরু করে দিলেন।

উনি ওয়াস রুমে থাকা অবস্থায় আমাদের এক পারিবারিক শুভাকাঙ্ক্ষী ছোটো ভাই নিজামকে ফোন করে আসতে বলেছিলাম।নিজাম স্থানীয় ছেলে, পরিবার নিয়ে থাকে নিমতলায়। সুখে দুখে, বিপদ আপদে সবসময় তার ভাইয়ার পাশে থাকে। নিচে আমার দেবরের পরিবার ছিলো। ওর ছেলে শিহাবকে ডাকলাম। আমার বড়ো ছেলে গাজী নয়ন তখন ঢাকায় পড়াশোনা করে।

নিজাম আসার আগেই আমার ছোটো ছেলে ও শিহাব এসে হাজির। আমি, ফাহমিদ ও শিহাব মিলে উনাকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম মাত্র পাঁচ হাজার টাকা যাদের ডিমান্ড তারা কোনো বড়ো সংগঠন নয়।পাড়াইল্যা পোলাপান ই হবে তুমি নরম মানুষ দেখে হয়তো দুস্টুমি করছে।

উনি আমাদের কথা কানে নিলেন না নাস্তা খেলেন না।নিমতলা থেকে নিজাম আসতে আসতে উনি বারবার তাড়া খেয়ে ভয় পেয়ে শিহাব কে পাঁচ হাজার টাকা আর ওদের দেয়া রকেট নাম্বার দিয়ে পাঠিয়ে দিতে বল্লেন। আমি ইশারা করে শিহাব কে চলে যেতে বললাম।শিহাব চলে গেলে নিজাম এল। ও, সব কথা শুনে একই কথা বল্লো। কেন দিলেন। এটা কোনো দুস্ট চক্র হবে।উনি বললেন, না তুমি বুঝছো না তোমার ভাবি ফাহমিদ বাইরে যায়।ওরা যদি কোনো ক্ষতি করে দেয়।শিশুর মতো কথা শুনে আমরা মুখ টিপে হাসি আর উনার জন্য চিন্তা করি।

এর মধ্যে আবার কল টাকা পাঠিয়েছে জেনেও বকাবকি। এখনো তারা পাইনি।

উনি প্রায় মূর্ছা যান।এমন অবস্থায় নিজামকে পাঠালেন শিহাবের খোঁজে। নিজাম ডানে বায়ে কোথাও খুঁজে না পেয়ে চলে আসলো।শিহাব কে পাবে কোথায়! সেতো চাচাকে শান্ত করতে আমার ইশারায় টাকা নিয়ে নিজ বুদ্ধি খাটিয়ে ঘরে গিয়ে দিব্বি বসে আছে। আবারও ফোন। পাঠানো হয়েছে বলার পরেও হুমকি ধামকি। নিজাম বল্লো ভাইয়া, “ওরা পেলেও এরকম করে। আপনি চুপচাপ থাকেন কল রিসিভ করেন না।

সারাদিন চুপচাপ থাকলেন।বেরোলেন না। পরদিন টিভি প্রোগ্রাম তখনও কল আসছে। রিসিভ না করাতে মোবাইলে গালি গালাজ করে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে ।উনি ঘটনার আকস্মিকতায় তব্দা খেয়ে বসে আছেন। নিজামকে সাথে করে টিভি প্রোগ্রাম করে আসলেন। নিজামকে নিয়েই সন্ধ্যার দিকে একটু মোড়ের দোকানের দিকে গেলেন। আমিও লাস্ট মোমেন্ট এর কেনাকাটার জন্য এক ভাবির সাথে লাকি প্লাজায় গেলাম।

পরদিন সকাল আটটায় বাস। অনেক ভোরে রওনা হতে হবে।

চলবে…

ফাতেমা হোসেন
৮/৩/২

About

Fatema Hossain

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}