March 27, 2022

কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র দর্শন (পর্ব-৭)

by Fatema Hossain in STORY0 Comments

সমুদ্র বিলাসের গেটের কাছে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হুমায়ুন আহমেদ এর স্মৃতি তে উদাস হওয়া মন টা নিয়ে এগিয়ে চাললাম প্রবাল সৈকতে। কাছাকাছি যেতেই দেখলাম অল্প অল্প জমে থাকা পানিতে ছোটো বড়ো অনেক প্রবাল পড়ে আছে। আমরা সব ভুলে কটকটে দুপুরে ছুটে গেলাম সেগুলোর কাছে। তারপর ছুটোছুটি হুটোপুটি! ফটোসেশান। একসময় ক্লান্ত হয়ে একটা ছাতার তলায় বসে জিরাপানি খেতে খেতে বিশ্রাম করছি, এমন সময় দেখলাম আট দশ বছরের কয়েকটি মেয়ে ঝিনুক শামুক খুঁটে এনে বিক্রি করছে। একটা মিস্টি মেয়ে আমাদের কাছে আসলে আমি তার থেকে দশ টাকা দরে দুটো মালা কিনে পরে নিলাম। এখনও একটা আছে আমার কাছে।

আমরা সমুদ্রের দিকে মুখ করে তাকিয়ে বসে আছি।
আল্লাহর সৃষ্টি কতই না সুন্দর! সুবহান আল্লাহ! তা দেখার সৌভাগ্য দান করায় অন্তর থেকে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হলাম। আলহামদুলিল্লাহ!

বামে দূরে দারুচিনি দ্বীপ হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। কিন্তু উপায় নাই ফিরতি জাহাজে টিকেট কাটা আছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই ফিরতে হবে। এইবার রাতে না থাকতে পারার কষ্টে বুকের মধ্যে হাহাকার করে উঠলো। আবার কি আর আসা হবে! কেন একটা রাতও থাকা হলো না। কিছুই তো দেখা হলো না। উনাকে থাকার কথা বলা যাবে না। দলছুট হবার ব্যাপার টা উনার নৈতিকতায় বাঁধবে। সত্যি বলতে কি আমিও পারতাম না। অবুঝ মন কত কথাই তো বলে ক্ষণে ক্ষণে! তাই বিষন্ন চিত্তে ফেরার পথ ধরলাম।

কেউ টম টম পেল কেউ পেলাম না। আমরা দুই ফ্যামিলি টম টম না পেয়ে রোদের মধ্যে ই হেঁটে হেঁটে জাহাজের কাছে পৌঁছালাম। যাত্রীতে ভরে গেছে। আমাদের জায়গা হল নিচে। প্রচন্ড গরম। অনেকে উপরে উঠে গেল। আমরা কয়েকজন নিচেই থেকে গেলাম। ইঞ্জিনের সামনে। তানভির এর মা এর ডায়বেটিস আর গরম দুটো ই বেশি। উনি পুরা বেহুশ হবার জোগাড়। একটা স্ট্যন্ড ফ্যান নিজের দিকে ফিরিয়ে রাখলেন। তার আবার ঢাকনা নাই। উনার সদ্য ছোটো করে ছাটা চুল ঢুকে যাছে। আমরা সবধান করে পারছিলাম না। উনি প্রচন্ড রেগে যাচ্ছিলেন। । একসময় উনার হাসবেন্ড ফেরদৌস ভাই কে ডেকে এনে উনাকে দিয়ে দিলাম।

এরমধ্যেই প্রফেসর সাহেব তার টাক মাথা আর বিশাল বপু নিয়ে হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় একটা চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়লেন। এবং সাথে সাথে বিকট আওয়াজে নাক ডাকতে লাগলেন। মজা পেয়ে উনার স্ত্রী সহ আমরা অনেকেই ভিডিও করে রাখলাম। পরে অবশ্য ডিলিট করে দিয়েছি।
কিছুক্ষণ পরে সবাই জাহাজের উপরে উঠে এলাম।

বাচ্চাদের খিদে পেয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার নেই। ওদের সাথে থাকা টাকা দিয়ে যে যার মতো করে খেয়েছে। একসময় অনেকেই দেখলো ভি আই পি লাউঞ্জে গিয়ে প্রফেসর সাহেব তার পরিবার নিয়ে চড়াদামে খাবার কিনে নিজেরা খাচ্ছে।

এতে বাচ্চাদের খারাপ লাগে। ওরা আবারও মন খারাপ করলো। স্বান্তনা দিয়ে আমাদের মতো করে চা কফিতে ম্যানেজ করলাম। সন্ধ্যার পর টেকনাফে পৌছালাম।

টেকনাফে এসে অন্ধকারে বাস খুঁজে সবাই চড়ে বসলাম। একেবারে বিদ্ধস্ত অবস্থা। কেউ কারো সাথে কথা বলার এনার্জি নাই। এভাবেই রাত সাড়ে নটা দিকে কটেজে এসে পৌছালাম। যে যার রুমে ঢুকে গোসল সেরে কাপড় বদলে নিচে নেমে গেল খাবার জন্য। আমরা চার পাঁচজন শেষে নামলাম।

উদ্দেশ্য নিচের হোটেলে খেয়ে নেয়া। কিন্তু নিচে এসে শুনলাম সবাই ঝাউবন রেস্তোরাঁয় গেছে খেতে আমাদের ও যেতে হবে। উনি খুব বিরক্তহলেন। আমরা দুইটা টম টম ধরে চল্লাম। সাথে থাকা আজমাইনের ছোট্ট (তিন চার বছর) ভাই ইস্পার গায়ে জ্বর নিয়েই ওর আম্মুর কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল। রাস্তা ফাঁকা শুন শান। ভয়ে ও সাগর থেকে আসা বাতাসে শীত শীত করতে লাগলো।

ফাতেমা হোসেন
২৭/৩/২২

About

Fatema Hossain

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}