February 4, 2022

অশিক্ষা ভ্রমণ (শেষ পর্ব-৪)

by Surajit Paul in STORY0 Comments

রাতে মুখ খুলে ! না ঠিক তা নয়, জালা ভরে ও.টি. গেলা। সাত জন টলতে টলতে মাড়োয়ারি ঢাবায় খেতে যাওয়া। নিচে বসে খাবার খাওয়া। পেট ভর খেয়ে দশটাকা দেওয়া। গরম গরম রুটিতে ঘি লাগিয়ে এমন ভাবে ছুড়ে দিত ঠিক থালায় মাঝে এসে পড়তো। দু রকম সবজির সাথে আতপ চালের ভাত, ডাল ও পাঁপড় স্যাঁকা ও ঘি, পেট ভর। খেয়ে সরু সিঁড়ি দিয়ে দোতলা থেকে নেমে আসা। হোটেলে গিয়ে 29 তাস খেলে ঘুমিয়ে পড়া।

পরদিন ৭.৩০মিঃ ঘুম থেকে উঠে গোছানো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে, বিহারীর দোকানে টিফিন করে মহেশ দের ঘরের দিকে রওনা । দুজনকে ছাড়ার সাথে পাঁচ জন মিলে গান ধরা। আজ দুজনার দুটি পথ গেছে বেঁকে……, ওঁদের বাড়ির গেটে।

তুলোগ লেটকরলিয়া, ব্রেকফাস্ট কে লিয়ে ইনতেজার কর রহে হ্যাঁয় হাম লোগ। আমরা করে এসেছি, sorry. প্রদীপ বলে ওঠে ববলু কাল আমরা বলে এসেছিলাম আমাদের গেস্ট তোরা। আরে ইয়ার ছোড়না ,হ্যায় না চার পাঁচ দিন। অপনা গাড়ী চলতে রহেগা।

ওঁরা ব্রেকফাস্ট সেরে নিল। দশটার সময় সবাই মিলে বেড়োলাম কিছু নেপালি বন্ধু দের ডেকে নিয়ে পরিচয় করার পর মাল রোডে ঠেক দেওয়া। নেপালি মেয়ে দেখে হাই হ্যালো করে চলা। দেখতে দেখতে দুদিনেই লোকাল হয়ে যাওয়া। রোজ নামচা- সকালের টিফিন ওদের ঘরে, তারপর বেরিয়ে পরা, এক বোতল করে বিয়ার টেনে ঢাবায় খাওয়া সেরে ঘুরে বেড়ানো। কখনো বর্ধমান মহারাজের বাড়ী,জলা পাহাড়,রাজ্যপাল ভবন, লেবং রেস কোর্স, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, মহাকাল মন্দিরের গুহায় ঢুকে যতটা যাওয়া যায়, আরো অনেক জায়গায়। পুরো দার্জিলিং ঘুরে শেষ। আর সন্ধ্যার আগে থেকেই সবাই মিলে মাল খেয়ে আর নেপালি মেয়ে দের সাথে কথা বলে বলে, মেয়েদের সাথে কথা বলার সাহস বাড়িয়ে নেওয়া যাতে করে এক একজন পূর্ণ রোমিও হয়ে ওঠতে পারি। মাড়োয়ারী বন্ধুরা এ ব্যপারে পথ প্রদর্শক।

এই কদিনে পাহাড়ের জনসাধারণ হয়ে উঠেছি। আর মনে হয় গুণ ও ধীরে ধীরে গ্রহণ করা শুরু। থাক গিয়ে সে সব কথা। চার দিন অতিবাহিত অতিথি রূপে। পকেট গড়ের মাঠ। অগত্যা ঠিক করা , কাল রওনা দেওয়াটা ফাইনাল।লজ্জায় বন্ধু দের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়ে উঠলো না, নিজেদের স্ট্যাটাস ভাবনায় আসায়। ওদের জানিয়ে দিলাম কাল সকালে আমরা শিলিগুড়ি রওনা দেব। ওঁরা বারবার অনুরোধ করলো আরো দু দিন থেকে যা। তোদের জন্য ফুল প্রুফ ও কুমীরের মতো মাল ও খাবার খেয়ে কাটালাম। বছরে দু’বার চলে আসিস এভাবেই।
সকাল হয়েছে চিন্তা বেড়েছে, কিভাবে শিলিগুড়ি পৌঁছাই। ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাই বাই করে দুশ্চিন্তার সমতল যাত্রা। কোথায় যাই কিভাবে যাই। রকে বসে গভীর আলোচনার পর স্থির হলো ট্রেনে ফিরবো, এখনোও ৩০ মিঃ আছে হাতে, গাড়ী ছাড়ার সময়। নেতাজির মতো আহ্বান ‘শিলিগুড়ি চলো’ , করো স্টেশন দখল। যা ভাবা তাই করা।

এখন ট্রেনে উঠে বসেছি। একটু ভুল হলো বসার জায়গা নেই দাঁড়িয়ে,কারণ ফার্স্ট ক্লাসে উঠেছি ।ভেবে চিন্তেই এই ক্লাশে, বিদেশিরা ওঠে বলে চেকিং হয় না। আমরা ঘুম, টুং ছেড়ে সোনাদায় পৌঁছে গেলাম। যতো গন্ড গোল সোনাদা থেকেই । ট্রেন ছাড়ার সাথে সাথে টিকিট চেকার এসে হাজির। টিকিট চেক করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, প্রায় এসে গেছে ফলে ভয়ে আমাদের অবস্থা অকল্পনীয়, নিদারুন,সামনে গিলা পেছন পিলা( হিন্দি স্টাইলে বলা)। ফিস ফিসিয়ে বলে দিলাম আমি যা করবো তোরাও সেই ভাবে চলবি।

টিটি: টিকট দেখাও। নেহি আছে। ট্রেন মে ব্যেঠ্ গিয়া উপর সে ফার্স্ট ক্লাস। বাপকা গাড়ী সমঝা। সামনের দিকে কাকে যেন ইশারা করলো , তিন চার জন নেপালি এগিয়ে আসছে। টিটি গলা হাকিয়ে রুপিয়া নেহি হ্যায় ,অব কার্শিয়াং কা জেল মে মর। ওর কথা শেষ বদাম করে মুখে ঘুসি এবং ট্রেন থেকে লাফ। দেখা দেখি পাঁচ জনই তাই করলো। এখন রাস্তায়,গাড়ি আস্তে হতে শুরু করেছে। পেছন থেকে একটা জীপ গাড়ি আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। ড্রাইভার বলে ওঠে সময় নাই গাড়ীর পেছনে ফটাফট উঠে পর। আমরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো উঠে পরলাম। ট্রেন থামার আগেই জীপ সাঁ সাঁ করে বেড়িয়ে গেল। কার্শিয়াং এ না দাঁড়িয়ে বেস কিছুটা গিয়ে ড্রাইভার গাড়ি দাড় করাল । কি হয়েছে ব্যাপার এবার বলো। আমরা সব কথা খুলে বললাম। ও বললো আমি তোমাদের নিয়ে যাব কিন্তু শিলিগুড়ি পৌঁছে ১২০/- টাকা আমায় কি ভাবে দেবে বলো। আমি নেপালি ভাষা বুঝি ও জানি। নেপালি তে ওকে বোঝালাম – দাজু তিমি চিন্তা ন গর স্ট্যান্ড পুগের চারজনা তিমি সংগ বসছ ,একজনা গয়ের রুপিয়া বোকের লিয়ের তিমিলাই দিনছ। হোস বস্ ।মানে স্ট্যান্ডে পৌঁছে চার জন তোমার কাছে থাকবে একজন গিয়ে টাকা এনে দেবে। তোমরা বসো। আমরা বাঁদর ঝোলা হয়ে শিলিগুড়ি র এয়ার ভিউ মোড়ে পৌঁছাই।
সুবীর কে পাঠালাম। টাকা নিয়ে এলো। ড্রাইভার দাজুকে (দাদা) ১২৫/- দিলাম। ও বলে বেশি কেনো দিচ্ছ। আমাদের জোড় করে ২৫ টাকা ফিরিয়ে দিল। তোমাদের সততার জন্য ২০ টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি মনে মনে ভেবেই নিয়েছিলাম তোমরা দিতে পারবেনা। যাও এই টাকা দিয়ে কিছু খেয়ে নাও। আমরা ওকে ধন্যবাদ দিয়ে, যে যার বাড়ী ফিরে চললাম।

আপনারাই বলুন এটাকে শিক্ষা ভ্রমণ না বলে অশিক্ষা ভ্রমণ বলাটা কি ভুল হলো। উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম?

— শেষ —

About

Surajit Paul

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}