ম্যাম বললেন,
——-কি ব্যাপার বলো তো,আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছো,বিশেষ কোন প্রয়োজন? ক্লাসে পড়া কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? অবশ্য অর্থ নীতি বিষয় একটু ক্রিটিক্যাল আচ্ছা আমি তোমাদের এক্সট্রা ক্লাস নিব বুঝলে।নিরাময় মূলক ক্লাস।
আমি বললাম,
——-জ্বি না ম্যাম , আমি অন্য কাজে এসেছি।
——-ও আচ্ছা , কি কাজ অবশ্য ই শুনবো।শোন আমি একজন প্রাইভেট শিক্ষক খুঁজছি।আমার মেয়ে অরুন্ধতী র জন্য। সে মূলত অরুনকে সঙ দেবে,গল্প করবে আর পুরোনো পড়াগুলো রিভাইস করাবে।আসলে পড়ার চেয়ে সঙ্গী দরকার।
——–আমি এ কাজটা চাই। আর ম্যাম আপনার লিখা গল্প কবিতা ভিষণ ভালো লাগে।
——তাই, আচ্ছা তোমার কি অর্থের বিশেষ প্রয়োজন। আমি সেটারও নোটিশ দিয়েছি। যদি কারো এ বিষয়ে হেল্প লাগে আমি হেল্প করবো সাধ্য মতো। কিন্তু তোমাকে দেখে তো খুব স্বচ্ছল মনে হচ্ছে। তোমার নাম কি?
——আমি মুগ্ধ , আমার আর একটা নাম আছে। আমি পৈতৃক নাম পাল্টে ফেলেছি।
—–কি আশ্চর্য ! তোমার নাম পছন্দ হয় নি? আমার নামও মুগ্ধ কিন্তু এটা তেমন কেই জানে না।
——আমাকে আমার ফুপ্পি দেবযানী বলে ডাকে।
—-তোমার এ নামটাও খুব সুন্দর দেবযানী। আচ্ছা কি জন্য এসেছো আমার কাছে? আর তোমার কোন আপত্তি না থাকলে অরুন্ধতী কে পড়াবে?
——জ্বি ম্যাম পড়াবো,আমার কোন আপত্তি নেই। আমি একটা পত্রিকার সম্পাদক। আমি আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই। আপনি গল্প , কবিতা লিখেন।আপনার লিখা আমি খুব পছন্দ করি।
——কিন্তু আমি তো ইন্টারভিউ দিই না।
আমি বললাম, আমার কাছে দিবেন।আমি আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।
——আচ্ছা এ বিষয়ে আজ কোন কথা বলব না। অন্য দিন কথা হবে, আমি ভেবে চিন্তে জানাবো। আজ আমার গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে।বিকেলে মিটিং আছে চেয়ারম্যান স্যার এর সঙ্গে স্টাফ মিটিং। আমি খুব বিজি।
আমি বললাম,
আজকে আসি ম্যাম, অরুন্ধতী কে বলবেন আমি পড়াব।
আমি ম্যাম এর চেম্বার থেকে উঠে এলাম।
আমার বিকেলে ক্লাস আছে কিন্তু করতে ইচ্ছে করছে না। বাইরে এলাম। মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে তুমুল বৃষ্টি। হোক আজ তুমুল বৃষ্টি, আজ বৃষ্টি তে ভিজবো।
আজকে একা একা হাঁটবো। একা একা হাঁটার মধ্যে অন্য রকম মজা,আজ হেঁটে হেঁটে যাব পল্লবী,সেখান থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে। একা অনেক ক্ষন বসে থাকবো।কি শান্তি অসংখ্য বৃক্ষের সঙে কথা বলা একা একা। পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখা। এখানে আমার একটা পছন্দের জায়গা আছে।আমি মাঝে মাঝে ই একা একা বসে থাকি।
বৃষ্টি নামছে এ মুহুর্তে। আমার মনে হলো অরুন্ধতী এ বৃষ্টি র মধ্যে একা একা বসে আছে।সে ম্যাম এর জন্য অপেক্ষা করছে।সে আয়নার সামনে এসে দাড়ালো।সে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।এ বয়সে আয়নায় নিজেকে দেখতে ভিষণ ভালো লাগে। আয়না তে নিজেকে দেখতে এরকম মনে হয় যেনো সে জলের আয়নায় নিজেকে দেখছে। সে ঝুঁকে পড়ে নিজেকে দেখছে।
আজকে অরুন্ধতী সুন্দর একটা নীল শাড়ি পড়ে আছে।নীল শাড়িতে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে তাকে। সে হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ি পড়েছে। নীল টিপ দিয়েছে।মনে হচ্ছে একটা নীল পরী আকাশ থেকে নেমে এসেছে।
আমি বৃষ্টি তে ভিজছি, তুমুল বৃষ্টি। আমি অরুন্ধতী কে ডাকলাম এসো দুজনে মিলে বৃষ্টি তে ভিঁজি।
অরুন্ধতী বলল,
আমি বৃষ্টি খুব পছন্দ করি, কিন্তু ভিঁজলে আমার টনসিল বাড়ে। আমি বৃষ্টি তে ভিজলে মা রাগ করবে।
আমি বললাম,
কিচ্ছু হবে না এসো। তোমাকে বৃষ্টি তে ভিজলে অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগবে নীল মেঘ যেনো তুমি।
পেছন থেকে আমাকে ডাকলো অনুসুর্য।
বলল,
এই মুগ্ধ এরকম করে বৃষ্টি তে ভিজছিস কেন জ্বর আসবে তোর,তোর না টনসিল সমস্যা।
আমি বললাম,
হোক টনসিল , আজকে বৃষ্টি তে ভিজতে ভিষন ভালো লাগছে।
আমার মনে হলো টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে। আমারও অরুন্ধতী র মতো নীল শাড়ি পড়ে ভিজতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমার কোন শাড়ি নেই। এবার বন্ধে ফুপ্পি র শাড়ি আনবো।
অনুসুর্য আবারও ডাকলো,এতো ভিজিস না উঠে আয়।
আমি তুমুল বৃষ্টি তে ভিজঁছি।

ক্রমশ ০০০
২০/৮/২২
শাহানা জেসমিন

About

Shahana Jasmin

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}