ভিক্টর আলো ফেলতেই বিড়াল্ টি লেজ গুটিয়ে বসল। বিপদের গন্ধ পশু পাখিরা নাকি সবার আগে পায়। ভিক্টরের মনে হলো বিড়ালের ভয়ার্ত চোখ খারাপ কিছু ইঙ্গিত করছে। ভেতরে ঢোকা ঠিক হবেনা । ওরা এসেছে রাত কাটাতে। রহস্যের সন্ধান করতে গিয়ে শেষে সব কুল হারাতে হবে।
ভিক্টর বলল, লিপন ভেতরে গিয়ে কাজ নেই। ওখানে আসলে কেউ নেই। সব মায়া। বিপদ আমাদের হাত ছানি দিচ্ছে।
লিপন বড় বড় নিশ্বাস ফেলে বলল, তুই ঠিকই বলেছিস। আমরা সতর্ক থাকা সত্বেও নিজেদের নিয়ন্ত্রন কেমন করে যেন হারিয়ে ফেলছি । চল নীচে নামি।
ওরা কামরায় এসে শুয়ে পড়ল। রাত ৪ টা বাজে । আজকের রাতটা মনে হচ্ছে অনেক লম্বা ।মঈন ঘুমিয়ে পড়েছে। লিপন ম্যাগাজিন পড়ছে। ওকেও বিশ্বাস নেই । যে কোনো সময় ঘুমিয়ে পড়তে পারে। ভিক্টর বিছানা থেকে নেমে ফ্লাস্ক থেকে গরম পানি ঢেলে একটা টি ব্যাগ ডুবিয়ে নিল। তারপর চিনি মিশিয়ে গরম চায়ে চুমুক দিল। আহ! শান্তি । ভোর হতে আর কিছুক্ষন বাকি। ভালোই ভালোই বাকি রাত পাড়ি দিতে পারলেই হলো। দ্বিতীয় বার চায়ে চুমুক দিতেই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকল ভিক্টর। ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। গোবিন্দর কথা অনুযায়ি এই হয়ে নওশি কিংবা হেলেন । ভিক্টরের হাতটা কেপে উঠতেই কিছুটা চা ছলকে পড়ে গেল। দ্রুত কাপ নামিয়ে মঈন আর লিপন কে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুলল। ওরা দুজন ঘুম ভাঙ্গা চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছ।
ভিক্টর ভয় পাওয়া কন্ঠে বলল, কে তুমি?
মেয়েটির সাদা পোষাক, শরীরে কোনো অলংকার নেই। এলোমেলো চুল বুকে পিঠে ছড়িয়ে আছে। নিঃস্পৃহ ভঙ্গিতে বলল, আমি হেলেন।
ভিক্টর আমতা আমতা করে বলল, হে-লেন তু- মি কি চাও ?
“ তোমাদের জীবন “
“ কিন্তু কেন?”
“এটাই আমার পন “
“আমরা তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি “
“ ক্ষতির হিসাব নিকাস আমি করিনা। তোমাদের মারার চেস্টা আমি করেছি কিন্তু পারিনি। রাত শেষ হওয়ার আগেই আমি তোমাদের মেরে ফেলব “
ওরা দুজন ভিক্টরের পাশে এসে দাড়িয়েছে । লিপন কাপা কাপা গলায় বলল, হেলেন আমাদের কথা শোন
“ আমি এখন কারো কথা শুনব না। আমি এখন জীবন চাই “
হেলেন এগিয়ে আসছে, এক পা, দুই পা । ওরা পেছনে সরে যাচ্ছে। ওদের কাছে চাকু আছে, আগুন আছে কিন্তু বের করার কথা ভুলে গেছে। পেছনে সরতে সরতে এক সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল । হেলেন খুব কাছে চলে এসেছে। ওর সুন্দর চেহারা বদলে গিয়ে পুরোপুরি কংকালে রুপ নিয়েছে। মাংশ হীন হাত ধীরে ধীরে সরে আসছে ভিক্টরের গলা বরাবর ।
হঠাৎ থমকে গেল হাত । সেই হাত আর আগে বাড়ল না। দূরে ফজরের আযান পড়ছে। সকাল হয়ে গেছে। হেলেন আবার মানুষের রুপ নিয়েছে। ভিক্টর ওর গলায় হাত দিল, এখনো সে বেচে আছে, বেচে আছে মঈন, লিপন।
হেলেন আচমকা দুহাতে মুখ ঢেকে কাদতে শুরু করল । ভিক্টর সাহস নিয়ে বলল, কি হলো হেলেন তুমি কাদছ কেন ?
হেলেন মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল, আজ আমার অভিশপ্ত জীবন শেষ হলো । আমার আত্মা আজ শান্তি পেলো।
“ আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না “
“ মানুষ হত্যা করতে আমার ভালো লাগত না। তবুও হত্যা করতে হতো। তোমরা আজ রাত বেচে গিয়ে আমাকে অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি দিয়েছ। তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
“ তুমি এখন কি করবে ?”
“ কবরে ফিরে যাব। আর কোনোদিন মানুষের রুপ নিয়ে মানুষের কাছে আসব না । বিদায়।
“ আমার কথা শোন হেলেন “
“ আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে “
হেলেনের শরীর আবছা হতে হতে এক সময় অদৃশ্য হয়ে গেল।
সমাপ্ত