ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ খুলনা যাবার উদ্দেশ্যে বাস স্টপে যাই। একদিন আগে টিকিট কাটার আগেই বলে নেই সিট জানালার পাশে দিতে হবে এবং পাশের সিট যেনো একজন মহিলার হয়।

যথা সময়ে বাসে উঠে আমার সিটে একটা ব্যাগ দেখে সরিয়ে বসে পড়লাম। কয়েক মিনিট পরে একটি ছেলে এসে বললো- আপু, এই পাশে বসবেন? আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, এটাই আমার সিট। আমি সব সময় জানালার পাশের টিকিটই কাটি।

কিছু না বলে আমার পাশে বসে পড়লো। আমি অবাক হয়ে বললাম- এটা আপনার জায়গা? ছেলেটি হ্যাঁ বললো। আমি বুঝতে পারলাম কোনো মহিলাকে না পেয়ে এই ছেলেটাকে দিয়েছে।

বাস ছেড়ে দিলো। আমি মাস্ক সরিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম। কয়েক মিনিট পরেই ছেলেটি প্রশ্ন শুরু করে দিলো। আমি কি করি ,আমি কোথায় যাবো, কোথায় থাকি, এমন অনেক প্রশ্ন। আমি বিরক্ত হয়ে বর আছে, ছেলে আছে দশম শ্রেণীতে পড়ে বলে দিলাম। ছেলেটির বয়স সম্ভবত ২৪ বছরের মতো। আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফেবুতে ঢুকলাম।

ছেলেটি হাত পা ছেড়ে বসে আছে। আমি যে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি বুঝতেই পারছে না। ঠিকভাবে বসতে পারছি না। এই প্রথম এমন অবস্থায় পড়েছি। যখনই একা যাবো কোনো মহিলাকে পাশে পাবই। এই প্রথম উল্টোটা হলো। কিছুই করার নেই চার ঘণ্টা পথ কষ্ট করেই যেতে হবে।

ছেলেটি কিছুক্ষন পরে বললো, “আমি আর্মিতে জব করি। গোয়েন্দা বিভাগে আছি। খুলনা থেকে এখানে আসামী ধরতে এসেছি। গতরাতে মাইক্রো করে ৮ জন এসেছিলাম। আসামী সহ ৯ জন হলো। বসার জায়গা সমস্যা হওয়ায় তাই আমি আজ বাসে যাচ্ছি। আপনাকে দেখে মনে হয় না আপনার ছেলে দশম শ্রেণীতে পড়ছে। আপনার কথা এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।” আমি কি তার কথা শুনতে চেয়েছি?

আমি চুপ করে আছি ফেবু তে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। বললো- আপনি ফেবু চালান? বললাম, হ্যাঁ। বললো- কি নাম আপনার? আমি রিকোয়েস্ট দেই। বিরক্ত হয়ে বললাম, অপরিচিতদের ফ্রেন্ড করি না। বললো- করেন না আপু প্লিজ, আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না। ছেলেটি নাছরবান্দা। আমি নাম বললাম, আর সে রিকোয়েস্ট দিলো।

মনে মনে ভাবলাম আজকেই তোকে ব্লক করে দিবো। মাথা ব্যাথা করছিলো চোখ বন্ধ করেও থাকতে পারছি না। ফেরিঘাটে পৌঁছাতেই আমড়া কিনে নিয়ে এসে খেতে বললো। আমি খাবোনা বলে বিরক্তি ভাবটা বুঝিয়ে দিলাম।

দুপুর প্রায় তিনটায় পৌছালাম। ছেলেটি আমার ব্যাগ নিয়ে অটো রিকশায় তুলে দিলো। খালার বাসায় পৌঁছে খালা,খালাতো ভাই ও ভাইয়ের বউকে ছেলেটির গল্প বললাম। তারা হেসে মজা নিলো বেশ। কিছুক্ষন পরে মেসেঞ্জারে ছেলেটি কল দিলো। আমি কেটে দিচ্ছি আবার কল দিচ্ছে। নয় দশবার কল কেটে দিয়ে ব্লক করে দিলাম।

সারাটা পথ আমাকে বিরক্ত করেছে। এমন বিবেকহীন মানুষ খুব কম দেখেছি। তবে ছেলেটি বলেছিলো – আপনি হয়তো আমাকে ব্লক করে দিবেন। আমি উত্তর না দিয়ে মনে মনে বলেছিলাম- আগে তো বাসায় যাই, তারপর দিবো।

লীনা ফারজানা
৩ সেপ্টেম্বর,২০২১ ইং

About

লীনা ফারজানা

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}