মোহ এমন একটা বিষয় যা প্রত্যেকটা মানুষের সাথে এমন ভাবে জড়িত চাইলেই তড়িঘড়ি করে মোহ থেকে বের হওয়া যায় না। তবে মানুষের মোহ কেটে যায়, কিন্তু ততক্ষনে জীবনকে উপভোগ করার মূল সময়টুকু আর থাকে না। অর্থের মোহ মানুষ কে রুপান্তরীত করে আনন্দহীন জড় পদার্থের মতো, আবার মোহ কেটে গেলে মানুষের সময় ফুরিয়ে যায়।
জাপানি বিষ্ময় বালক উশিনারার কথা বলা যাক, উশিনারা ছিলো জাপানের সবছেয়ে সুন্দর ও সুদর্শন বালক। সৌন্দর্যেই ছিলো তার মোহ।
একদিন উশিনারা সমূদ্রের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো, তখন সমূদ্র থেকে এক গভীর শব্দ ভেসে আসলো তার কানে।
তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে উশিনারা তুমি তোমার এ সৌন্দর্য কী অনন্ত করে রাখতে চাও?
সৌন্দর্যের মোহে মত্ত উশিনারা ক্ষানিক না ভেবেই উত্তর দিলো চাই।
আমি সারা জীবন এ সৌন্দর্য ও তারুন্য ধরে রাখতে চাই।
তখনই সমূদ্র থেকে উঠে আসলো অপরুপ সুন্দরী এক সমূদ্র কণ্যা, উশিনারাকে বললো তুমি সৌর্ন্দয্য ধরে রাখতে চাইলে এখনি সমূদ্রের বুকে ঝাপ দাও।
উশিনারা বাধ্য ছেলের মতো সাথে সাথে ঝাপ দিলো সমূদ্রে, এবং বাস করতে লাগলো অপ্সরী সমূদ্র কন্যাদের সাথে।
বহুকাল উশিনারা সুন্দরী সমূদ্র কন্যাদের সাথে থেকে পার করে দিয়ে একটা সময় ঠিকই তার মোহ কেটে গেলো, সমূদ্র কন্যাদের সৌর্ন্দয্য তাকে আর মোহিত করছেনা এবং কি নিজের অনন্ত তারুণ্যতা ও আর তাকে ফুলকিত করছে না, একঘেয়েমিত ভরে যাওয়া উশিনারা ভাবলো এক সৌর্ন্দয্য ছাড়া কিছুই সে নিতে পারলো না, জীবন থেকে পৃথিবী থেকে।
উশিনারা ছট পট করতে লাগলো পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য, সে আর কোন ভাবেই সমূদ্র কন্যাদের সাথে থাকতে চায় না।
তাই সমূদ্র কন্যাদের সর্দার বললো দেখ উশিনারা তুমি হয়তো বুঝতেই পারোনি কত কাল তুমি এ সমূদ্রে বাস করেছো, তোমার সময়ের কিছুই পৃথিবীতে নেই, তোমাকে চিনতে পারবে এমন একজন ও পৃথিবীতে নেই,
তুমি ওখানে গিয়ে কি করবে?
তবু উশিনারা পৃথিবীতে ফিরে আসতে চায়।
তাকে ফিরেয়ে দেয়া হলো, এবং তাকে একটা ছোট্ট কৌটা দেয়া হলো। বলা হলো এতে তোমার সৌন্দর্য লুকানো আছে।
উশিনারা পৃথিবীতে ফিরে আসলো, কিন্তু সে আশ্চর্য হলো সে কিছুই চিনতে পারছে না, তাকে ও কেউ চিনছে না, সে ভেবেছিলো তাকে নিয়ে অনেক মাতা মাতি হবে কিন্তু কিচ্ছু হলোনা, কেউ ফিরেই তাকালো না, দুঃখে কষ্টে ক্লান্ত উশিনারা ভাবলো একবার কৌটাটা খুলেই দেখি।
কৌটা খোলা মাত্রই বার্ধক্য এসে তাকে গ্রাস করলো এবং সে মারা গেলো।
আউয়াল যাযাবর
২৩/০২/২০২২ইং