নিশির ব্যাগ এ কিছু কয়েন ছিলো। প্রথমে ও সুনিল কে ফোন করলো। – সুনিল আমি এয়ারপোর্ট এ, দেশে ফিরে যাচ্ছি। ” আচ্ছা ঠিক আছে, জানোতো উনি এখন টেক্সাস এ, আমার লাইফ টা হেল করে দিচ্ছে, উনার মতো সিক একটা লোকের সাথে তুমি এতোদিন কিভাবে ছিলা ভগবান ই জানে “
আমি দুঃখিত। তোমাকে থ্যানক্স দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি, তুমি অনেক করেছো আমার জন্য।
“ঠিক আছে, সেইফ জার্নি “।
তারপর ও ফোন করলো আরিফ কে।
আমি নিশি এয়ারপোর্ট এ, বাংলাদেশ এ ফিরত যাচ্ছি।
” নিশু তুমি কেনো এটা করলে?
“- কি করেছি। ” তুমি জানো পুরা নিউইয়র্ক জানে তুমি একটা হিন্দু লোকের সাথে পালিয়েছ, এবং উনার সাথে তোমার অনেক দিনের সম্পর্ক ছিলো, সুমন সাহেব যেভাবে কাঁদছিলেন সবাই বিশশাস করেছে”
” নিশু আমি বুজতাম তোমার মনে অনেক দুঃখ, অনেক অভিমান, আমি অনেক চেস্টা করেছি তোমার কাছ থেকে জানতে, কিন্ত তুমি এত চাপা কখনো কিছু বলো নাই”।
কি করতেন জানলে?
” অনেক কিছুই করা যেতো, আমি তো তোমার কাছ থেকে ২% রিস্পন্স ও পাই নাই।আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি, কিন্তু বলতে পারি নাই, সেই সুযোগ ই তুমি কখোনোই দেও নাই।
–আচ্ছা আমার বাংলাদেশের নাম্বার টা চাইলে রাখতে পারেন।
” হ্যা প্লিজ বলো, আমি অবশ্যই ফোন দিবো।
আচ্ছা একটা কথা জানার ছিলো, সবার মতো আপনি ও কি বিশশাস করেছেন, আমি একটা হিন্দু ছেলের সাথে পালিয়েছি? ফোনে টুন টুন শব্দ, কয়েন শেষ।
নিশি ভাবতে লাগলো বাংলাদেশ এ যাওয়ার পর কার কি অনুভুতি হবে, আম্মা দাদু হয়তো কথাই বলবে না। চাচা, চাচি, ফুফুরা হয়তো সারাক্ষণ বাকা চোখে তাকাবে, আর উনাদের মেয়েদের ওর সাথে মিশতে দিবে না, আরো আছে খালারা। এইসব ভেবে এখন আর যেতে ইচ্ছা করছে না।
এনাউয়েন্সমেন্ট হচ্ছে। চেকইন করে ও ফ্লাইট এ বসলো। বেশিরভাগ সময় ই ওর ঘুমিয়ে কাটলো।
ঘুম ভাঙলে একটাই ভাবনা মাথায় এসেছে, লেন্ড করার পর ওর কপালে কি অপেক্ষা করছে। ও লেন্ড করলো, আব্বা আর ভাইয়া ওকে নিতে এসেছে। ও ভেবেছিলো আব্বাকে দেখে ওর অনেক কান্না পাবে, কিন্তু না আব্বা ওকে জড়িয়ে ধরলো। ” কেমন আছিস মা? ” – ভালো আছি আব্বা। ভাইয়া জড়িয়ে ধরে বললো ” কি যে ভালো লাগছে তোকে দেখে, খুব টেনশন এ ছিলাম রে”।
নিশি বাসায় এলো, আম্মা নিশিকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো, নিশি বুঝতে পারছে না, ও শক্ত হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। দাদু এসে আম্মাকে বললো ” মেয়ে টা এতোদুর থেকে এসেছে, ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করতে দাও”। নিশি দাদু কে সালাম করতে গেলো, দাদু ওকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বললো ” তুমি যে সহি সালামতে ফিরত আসছো এটাই আল্লার কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া। আমি নামাজ, রোজা নিয়ত করেছি। নামাজ পড়তে যাই, তারপর বসে কথা বলবো।
আম্মা বললো ” যা মা চেঞ্জ করে আয়, কেউ খায় নাই, সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ইলিশ মাছ বেগুন দিয়ে রান্না করেছি, তোর পছন্দের।
নিশির বাথরুমে যেয়ে খুব কান্না পাচ্ছিলো। কতো উল্টা পাল্টা ভাবনা এসেছে আম্মাকে নিয়ে, দাদুকে নিয়ে। নিশি খেতে বসলো, কতোদিন পর আম্মার হাতের সেই শাদ।
মামা খালাদের ফোন আসছে একটার পর একটা, সবার ফোনের রিপ্লাই আম্মা দিচ্ছে, আমার মেয়ে আমার বুকে ফিরত এসেছে, এটাই আল্লার কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া, তোমরা দোয়া কইরো। ভাবি নিশিকে বললো এতো লম্বা জার্নি করে আসছো যাও একটু রেস্ট নাও। চাচি আসলো দেখা করতে, ও গুমের ভান করে শুয়ে থাকলো, ইচ্ছা করছে না কোন প্রস্নের সামনাসামনি হতে।
সন্ধার সময় সবাই একসাথে বসলো, কেউ সুমন কে নিয়ে কোন কথা জিজ্ঞাস করছে না, বা প্রবাস নিয়ে কোন প্রশ্ন করছে না। আম্মা উশখুশ করছে, ও বুঝতে পারছে।
আব্বাকে নিশি বললো – আব্বা আমি এস এস সি পরিক্ষা দিতে চাই। আব্বা বললো পরিক্ষার আর ৫ মাস বাকি, তুমি পারবা?
জি আব্বা ইনশাআল্লাহ।
” কিন্তু এখন তো রেজিস্ট্রিশন হয়ে গেছে, প্রাইভেট এ দিতে হবে”
তাই দিবো।
ভাইয়া বললো ” আমার এক ফ্রেন্ড আছে বোর্ড অফিস এ, আমি কাল কথা বলবো”
রাত্রে ফোন এলো সুমন এর, ও বাংলাদেশ এ ফিরত এসেছে উনি জেনে ফেলেছেন, উনি ও বাংলাদেশ এ আসছেন।।