আজ সন্ধায় পহেলা বৈশাখ এর প্রোগ্রাম। নিশি কাজ করছে আর ভাবছে, মিস্টার স্টিফেন কে বলে আজ একটু আর্লি বের হবে। লাঞ্চ এর পর পর আরিফ এলো, নিশি কে একটা চিরকুট দিলো হাতে, কফি নিয়ে টেবিলে বসলো। নিশি বাথরুম এ যেয়ে চিরকুট টা পড়লো, ( আত্মতৃপ্তির জন্য যদি কেউ কারো অভিবেক্তি প্রকাশ করে, আর সেটা অন্যায় হয়, তবে সেই অন্যায় এর জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থি। আমি পারকিং এ তোমার অপেক্ষায় থাকবো) মিশি স্টিফেন কে বলে পারকিং লট এ গিয়ে দেখলো আরিফ ওয়েট করছে। কাছে যেতেই দরজা খুলে দিয়ে বললো,
“আজ ও ফিরিয়ে দিবে” নিশি কিছু না বলে গাড়িতে উঠলো। ‘ জানো এই কয় দিন আমি কিন্তু তোমায় দেখেছি ” — মানে? ” আমি প্রতিদিন বাইরে থেকে গ্লাস দিয়ে তোমায় দেখেছি” — ডাকেন নাই কেনো? ” তুমি ফিরিয়ে দিবা এই ভেবে, যেমন সেইদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলে।
দেখো নিশু আমি জানি আমি যা করছি এটার কোন রেজাল্ট নেই” – তাহলে কেনো করছেন?
” আমার মনের শান্তির জন্য, আমার ভালোলাগার জন্য” — কিন্তু এই ভাবে মেলামেশা, যদি বাংগালি কেউ দেখে, কি হবে ভেবেছেন?
” এটার উত্তর আমি পরে দিবো” পিছন থেকে একটা বক্স বের করে নিশির হাতে দিয়ে বললো
” এটা আমার রিকোয়েস্ট এই শড়িটা তুমি আজ পরবে” – না, কেনো আমার অনেক শাড়ি, আমি এটা নিবো না। ” বন্ধু কি বন্ধু কে কিছু দিতে পারে না”
পারে, কিন্তু আমি এটা নিবো না, ‘ প্লিজ আমি অনেক সখ করে তোমার জন্য কিনেছি” -বুঝেছি, কিন্তু এটা আমি নিতে পারবো না, আপনি কি আমাকে নামিয়ে দিবেন? না আমি চলে যাবো?
আরিফ গাড়ি স্টার্ট দিলো, পথে একটা ডাস্টবিন এর সামনে থামলো, শাড়িটা ডাস্টবিন এ ফেলে দিলো।
ফেলে দিলেন কেনো? যার জন্য নিয়েছিলাম সে তো নিবে না, আমি এটা দিয়ে কি করবো। – রাগ করেছেন? ” না তোমার এইগুলি তে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমি কি তোমার হাত টা একটু ধরতে পারি? ” নিশি হাত টা এগিয়ে দিয়ে বললো – নেন ধরেন। আরিফ হাত টা ধরলো না। শুধু বললো ” তুমি এমন কেনো? ” – কেমন?
” কিছু না, তুমি তোমার মতো।”
আরিফ ওকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। সুমন ফোন করে বল্লো তুমি রেডি হয়ে নাও, আমি আসছি। ও আয়নার সামনে বসে সাজলো, রেডি হলো,( নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলো) লাল জামদানি তে ওকে অনেক সুন্দুর লাগছে। সুমন এসে ওর দিকে একবার তাকালো, কিছু বললো না।
ও প্রোগ্রাম এ যাওয়ার পর সবাই ওকে ঘুরে ঘুরে দেখছে,, ওর চোখ একজন কেই খুঁজছে। একটু পর পাশ থেকে উনি ৭ টা লাল গোলাপ দিয়ে বললো, এটা নিতে ও আপত্তি? নিশি তাকিয়ে দেখলো সুমন একটু দূরে, স্টেজ এর সামনে। হল রুম টায় আলো অনেক কম, স্টেজ টাতে অনেক আলো, ও ফুলগুলি নিলো। ও একটা চেয়ার এ বসলো, সামনেই স্টেজ। একটু পর আরিফ এসে দুইটা কালো ক্লিপ দিলো, ” ফুল গুলি কি চুলে আটকানো যায়” নিশি কথা না বলে ক্লিপ দুইটা নিলো, দুইটা গোলাপ কানের পাশে ক্লিপ দিয়ে আটকালো। আরিফ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আস্তে করে বললো, থানক্স।
এসো হে বৈশাখ গান এর সাথে নাচ হচ্ছে। এর মদ্ধে ভাবিরা এসে হাই হেলো করলো, মোটামুটি নিশিকে সবাই তুমি করেই বলে। ২/৩ জনের গানের পর আরিফ স্টেজ এ উঠলো, ” আমার এই গান বিশেষ একজন কে ডেডিকেট করছি।”
১/ (বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে,বিনা কারনে )
২/ ( যেখানে সিমান্ত তোমার সেখানে বসন্ত আমার)
তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হলো। প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে রাত
১২ টা। আরিফ আজ অনেক চুপচাপ ছিলো, কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলছিলো না। বাসায় এসে ও চেঞ্জ করে শুতে যাবে, তখন সুমন বললো “তোমার তো কাল ডে অফ” – হুম। “একটা কাজ আছে” – বলো। সুমন কাবার্ড থেকে সেই হলুদ খাম টা বের করে দিয়ে বললো “এটা তে সাইন করে দাও।”
কি এটা? ” ডিভোর্স লেটার” – মানে কি? “তোমাকে বলেছিলাম না কন্ট্রাক মেরি করবো”
তাহলে ডিভোর্স লেটার কেনো? ” মুর্খামি করবা না, এখানকার ইমেগ্রেশন জানে তুমি আমার ওয়াইফ, ডিভোর্স না দেখালে আর একটা বিয়ে করতে পারবো না, তাই”। নিশির মাথা ঘুরছে, ও দেখলো তিনমাস আগের ডেট দেওয়া ডিভোর্স লেটার এ। ও শুধু বললো – খুব টায়ার্ড লাগছে, কাল করি। ” একটা সাইন ই তো আজ কাল আবার কি” – আজ করবো না বলে নিশি অন্য রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে, তখনি সুমন ওকে এতো জোরে চড় মারলো, নিশির নাক দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো আর ও মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। নিশির যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখলো ও সোফার উপরে, আর সুমন ওই রুমে ঘুমাচ্ছে।
নিশি উঠে চোখে মুখে পানি দিলো, রক্ত গুলি জমাট বেধে ছিল, ওই গুলি পরিষ্কার করলো, গোলাপি গেঞ্জি টাতে রক্ত চট চট হয়ে আছে,চেঞ্জ করলো, একটা ফ্রেশ জামা পরলো।
( আর জিবনের অনেক বড় একটা ডিসিশন নিলো)
চলবে…