বর ( সুমন) এর কথামতো নিশি পরদিন কাছাকাছি দুই তিনটা দোকানে গেলো চাকরির সন্ধানে। ( এই ৮ দিনের প্রবাস জিবনে নিশি দুই দিন সুমনের সাথে বের হয়েছিল, একদিন বাজার করতে, পাশাপাশি সুমন ওকে বলছিলো এর পর থেকে বাজার ওকেই করতে হবে, আর একদিন সুমনের এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো, বন্ধু রাশেদ, আর বন্ধুর বউ লাভলি, সেইদিন নিশির অনেক ভালো লেগেছিলো, ১০ দিন পর মন খুলে কথা বলতে পেরেছিল বলে, লাভলি ভাবি এখানে আছে ২ বছর, মেকডোনালস এ চাকরি করে) সুমন এর কথা মতো ও দোকানে দোকানে জিজ্ঞেস করলো, ” I am looking for a job” দুই দোকানে কি যে বললো নিশি কিছুই বুঝতে পারছিলো না, এক দোকান এর ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলো
” Are you from India?
নিশি বললো – No from Bangladesh.
তারপর এইটুকু বুজলো ওদের কোন লোক দরকার নেই। নিশি বাসায় এসে কাপড় ওয়াশিং মেশিন এ দিয়ে, রান্না শেষ করে দেখলো মাত্র ৬ টা বাজে, সুমন আসবে সেই ৮ টায়। নিশির এখন ভাবার সময়। * আচ্ছা কেন ওর জীবন টা এমন হলো? এখন তো ওর SSC ফাইনাল এর জন্য রেডি হওয়ার কথা, কতো লিখাপড়া করার কথা, আব্বা চাইতো ও ডাক্তার হবে, এই জন্য সাইন্স নিয়েছিলো, ” আর আজ ও দোকানে, রেস্টুরেন্ট এ ঘুরছে কাজ করবে” কেন হুরমুর করে ওকে বিয়ে দিয়ে দিলো, এমন ও তো না ও কারো সাথে রিলেশন এ জরিয়েছিলো। সুমন এলো সময় মতো, এসেই জিজ্ঞেস করলো ” গিয়েছিলা জব এর জন্য? নিশি যা সত্যি তাই বল্লো, ” মাত্র তিন টা? সারাদিন ঘর এ বসে থাকো, আশেপাশে ১০০ এর বেশি দোকান আছে, আর না বুঝার কি আছে? তোমাকে তো বার বার বলেছি ইংলিশ টা ভালো করে শিখে আস ” নিশির খুব কান্না পাচ্ছিলো, ও শুধু বলতে পারলো, কাল আবার যাব। নিশি শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো, এই কয় দিন এ সুমন একদিন ও ওর সাথে ভালো করে কথা বলে নাই, নিশি জিবনের প্রথম রান্না করেছে এখানে এসে, বলার ও প্রয়োজন মনে করে নাই, জিবনের প্রথম রান্না ভালো হয়েছে, হলুদ বেশি হয়েছিল সেদিন খুব মেজাজ দেখিয়ে বলেছিলো –
” এতো হলুদ দেয় নাকি” অথচ বাংলাদেশ এ নিশি কোনদিন রান্না ঘর এ যায় নাই। পরের কয়েক দিন নিশি অনেক গুলি দোকান, রেস্টুরেন্ট এ গেলো চাকরির খোজ এ, কোথা ও কিছু হলো না। একদিন নিশি বাড়ির রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলো, অনেক কস্টে খুজে পেয়েছে। তারপর থেকে নিশি একটা কাগজে ঠিকানা লিখে জ্যেকেট এর পকেটে রাখতো।
এক রবিবার সুমন এর অফ ডে,
প্রায় সারাদিন নিশিকে নিয়ে শিখালো কিভাবে সাবওয়ে তে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয়। শহর এর দিকে, কারন ওখানে অনেক জব পাওয়া যায়। সেদিন নিশির খুব ইচ্ছা করছিলো এতো এতো খাবার দোকান, আজ সুমন নিশ্চয় বাইরে খাওয়াবে, ওর বলার সাহস হচ্ছিল না। অনেক বড় একটা শপিং মলে নিয়ে গেলো দেখানোর জন্য “কতো বাচ্চা মেয়েরা এখানে কাজ করছে দেখো” অনেক ইন্ডিয়ান মেয়ে ও আছে।
বাসায় এসে খুব মেজাজ দেখিয়ে সুমন যে কথা টা প্রথম বললো,
” এই সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে কেনো”
এটার উত্তর জানা ছিলো না নিশির।
চলবে…