বাড়িতে এসে মঈন ব্যাগ গোছাতে শুরু করে। এই শহরে সে থাকবে না । রাতের বাসেই রওনা হয়ে গেল। গ্রামে পৌছাতে ছয় ঘন্টা লাগে । বাস স্টপেজ থেকে কিছুটা পথ রিকশায় , কিছুটা পথ হেটে যেতে হয় । মঈন ভোর বেলা বাস থেকে নেমে হাটা শুরু করল। বাসে আসতে ভয় পেয়েছিল কিন্তু হেটে যেতে ভয় লাগছে না। হেঁটে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবে না। বাংলোর কেয়ারটেকারকে খবর দেয়া হয় নি। তার জন্য এই গ্রামে রাত জেগে বসে থাকবে এরকম কোনো আশা নেই।
মঈনের ধারনা ভুল। কেয়ারটেকার বসে আছে দরজার গোড়ায়। কেয়ার টেকারের নাম শহীদ। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। মঈনকে দেখে দরজা খুলে দিল।
মঈন একটু অবাক হয়ে বলল, তুমি আমাকে কোনো প্রশ্ন করলে না শহীদ ভাই।
কেয়ারটেকার বলল, আপনি ভালো আছেন মঈন ভাই ?
” হ্যা ভালো আছি। তোমার কন্ঠ এরকম লাগছে কেন ? ”
” ঠান্ডা লাগছিল । এখনো ভালো হয় নি । আপনি ঘরে গিয়ে বসেন আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি ”
“শহীদ ভাই ”
“জে ”
তুমি লুঙ্গিটা উচু করে পর। পায়ে বেধে পড়ে যাবে তো ”
“পড়ব না। অভ্যেস হয়ে গেছে ”
মঈন হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নাস্তা সেরে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সারা রাতের ক্লান্তির কারনে অল্প সময়েই ঘুমিয়ে পড়ল। সেই ঘুম ভাঙল দুপুরে ।
মঈন বাইরে এলো । কেয়ারটেকার কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না । রান্না ঘরে বুয়া রান্না করছে। মাংশের ঘ্রান পাচ্ছে মঈন। গোসল সেরে মাংশ ভাত খেয়ে বসে বসে বই পড়ল মঈন। কিন্তু কেয়ার টেকারের দেখা নেই। বুয়াও জানে না কোথায় গেছে। কেয়ার টেকার এলো সন্ধ্যা বেলা। ঘরে হারিকেন জ্বালিয়ে দিল। এখানে এখনো বিদ্যুৎ এসে পৌঁছায়নি । মঈন বলল, শহীদ ভাই, সারাদিন কোথায় ছিলে ?
“বাড়িতেই ছিলাম”
“সারা বাড়ি খুজেও তোমাকে পাই নি। আর তুমি বলছ এখানেই ছিলে?”
“আমাকে খুজবেন না। দরকার হলে ডাক দেবেন। আমি চলে আসব ”
মঈনের খটকা লাগে। কেমন যেন বদলে গেছে শহীদ। তার চাল চলন , কথা বার্তা কেমন যেন অন্য রকম ।
মঈন বলল, তুমি মাথা নীচু করে কথা বলছ কেন ?
” কোনো কারন নাই ”
” হারিকেন নিয়ে আমার কাছে এসো ”
” কি করবেন?”
” তোমার চোখ দেখব ”
” চোখ দেখার দরকার নাই। আমি ভালো আছি ”
” তুমি আমার কাছে এসো ”
চমকে উঠল মঈন। শহীদের চোখ রক্ত লাল। মনির অংশ ফাঁকা । সেখানে ক্ষীন আলো জ্বলছে বলে মনে হলো ।ভালোভাবে দেখার সাহস হলো না। হারিকেন নামিয়ে মঈন বলল, তোমার চোখের এই অবস্থা কেন ?
” লোকজন ভীষন মারধর করছিল ”
” কেন ?”
” ওরা ঘরের জিনিষ চুরি করতে এসেছিল ”
” চোখের সাথে তোমার মারধরের কি সম্পর্ক ?”
” আমি বাধা দিছিলাম ”
” সব কথা এক সাথে বলছ না কেন ?”
” আমি এখন যাই , মেলা কাজ আছে ”
” যাবে মানে ? এই টাকা গুলো রাখো । কাল ডাক্তারের কাছে গিয়ে চোখ দেখাবে । ওষুধ কিনবে । এই চোখ যেন আমাকে আর দেখতে না হয় ”
চোখ দেখেও মঈন কিছু বুঝল না। অনেক দিনের কেয়ার টেকার। মনে কোনো সন্দেহ এলো না। সন্দেহ করলে ঘটনা হয়ত বদলে যেতে পারত । ভাগ্য হয়ত বদলে যেতে পারত।
চলবে…