মঈন দৌড় শুরু করল। মরন পন দৌড় ।কতটা পথ যে দৌড়ে এসেছে সে দিকে খেয়াল নেই। ওর পেছন পেছন কে যেন আসছে। দেখার মত সাহস নেই। এখনো সাঁকোর কাছে আসতে পারেনি । অথচ আসবার সময় সাঁকো থেকে বিল বেশি দূর মনে হয় নি। সে কি ভুল পথে এসেছে?
মঈন আর দৌড়াতে পারছে না। তার খুব ক্লান্ত লাগছে। হাঁপানি রুগিদের মতো করে শ্বাস টানছে। ঘামে ভিজে গেছে শরীর। একটু পানি প্রয়োজন, একটু বাতাস প্রয়োজন। মঈন মাটিতে শুয়ে পড়ল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। কে যেন ওর কাঁধে হাত রাখল । চমকে উঠে মঈন বলল, প্লিজ অনিতা আমাকে মেরোনা , আমাকে —–
কথা শেষ করার আগেই দেখল হারিকেন হাতে পাহারাদার বখতিয়ার দাঁড়িয়ে আছে । নতুন আশায় , ভালোলাগায় মনটা ভরে গেলো।
মঈন বলল, তুমি হঠাৎ কোথায় গিয়েছিলে?
” আমি কোথাও যাই নি”
“যাওনি মানে কি ?’
” আমি বাড়িতেই ছিলাম ”
” কিন্তু আমি, তুমি আর অনিতা একসাথে বিল পর্যন্ত গিয়েছিলাম ”
” আমি কোথাও যাইনি সার ”
” আমি এখন কোথায় ? ?
” মাঠে ”
” মাঠে মানে কি ? আমার স্পস্ট মনে আছে আমি সাঁকো পেরিয়ে অনেক পথ গিয়েছিলাম । বাড়ি কতদুর বখতিয়ার ?’
“ঐ তো বাড়ি’
সব কিছু অবিশ্বাস্য লাগছে। মঈন বুঝতে পারছে না কিছুই। ঘরে এসে পানি খেয়ে শুয়ে পড়ল । বিছানায় শুয়ে মনে হলো জ্বর আসছে। প্রচন্ড ভয় পেলে জ্বর আসে। পাঁচ দিন সেই জ্বর থাকল ।বুয়া বেশ যত্ন করেছে এই পাঁচদিন ।
শেষ বিকেলে বারান্দায় বসে আছে মঈন। শরীর এখনো ক্লান্ত । বুয়া এক কাপ চা মঈনের হাতে দিয়ে বলল, ভাইজান , আপনি আর কয়দিন থাকবেন ?
” জানিনা। ”
” আপনি বলেছিলেন একমাস থাকবেন । আজ একমাস শেষ হলো ”
বুকের ভেতর উত্তেজনা অনুভব করে মঈন। তারমানে আজকের দিনটা পার করতে পারলেই তার বিপদ কেটে যাবে। মঈন চেয়ার ছেড়ে পায়চারি করতে শুরু করে। দূরে তাকাতেই দেখল একটি মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। অনেকটা চেনা চেনা লাগছে । মঈন এক পা দু পা করে কাছে এলো। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি কি রোজি ? দবির চাচার মেয়ে ?
মেয়েটি বলল, জি । আপনাকে তো জিনতে পারলাম না
” আমি মঈন। ঢাকায় থাকি। চাকরি করি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যংকে । আমি এই গ্রামেরই ছেলে। এই বাংলোতে আছি ।
রোজি অবাক হয়ে বলল, এই বাংলোতে ?
“জি , চমকে উঠলেন কেন ? ”
” কারন আছে। আপনি আমার দিকে একবার ভালোভাবে তাকান ”
“কেন ?’
” পরে বলছি ”
রোজি চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাকে তো মানুষই মনে হচ্ছে । কিন্তু এই ভুতুড়ে বাড়িতে আপনি একা কিভাবে আছেন ?
” ভুতুড়ে বাড়ি মানে কি ? ”
” শহীদ ভাই মারা যাবার পর এই বাড়ি ভুতদের দখলে চলে যায় ”
“শহীদ ভাই মারা গেছে মানে কি ? ”
” কেন আপনারা জানেন না । প্রায় এক বছর হলো উনি মারা গেছেন। বাবা আপনাদের চিঠি লিখে জানিয়েছিল । আপনারা কি সেই চিঠি পাননি ? ”
” রোজি, আপনি এসব কি বলছেন । শহীদ ভাই মারা যাবে কেন । সেতো এখনো এই বাংলোতে আমার সাথেই থাকে । পাহারাদার বখতিয়ার, বুয়াও থাকে ।”
” বিশ্বাস করেন শহীদ, বখতিয়ার দুজনেই ডাকাতের হাতে মারা গেছে । আপনি এখনি আমার সাথে চলুন আমাদের বাড়িতে । সেখানে
আজ রাত থেকে কালকেই ঢাকা চলে যাবেন ।”
রোজির পায়ের দিকে তাকালো মঈন । ওর পা মাটি স্পর্শ করে আছে । একে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু মন থেকে দ্বিধা কাটেনা । সেই দ্বিধা নিয়ে ঘরে এলো । দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে প্যান্ট পরলো। অভ্যাস বসত ডাকল, শহীদ ভাই ?
সাথে সাথেই উত্তর এলো , জে
রোজি কাছে সরে এলো ভয়ে। খামচি মেরে মঈনের হাত ধরে আছে। মঈন ভাবল বড্ড ভুল হয়ে গেছে। শহীদ সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মঈন বলল, আমার জুতো জোড়া বের করে দাও ।
শহীদ নীচু হয়ে জুতো বের করছে। নীচ থেকে লুঙ্গী সামান্য সরে যেতেই দেখল শহীদের পা শুন্যে ভাসছে। রোজি মুখ চেপে রেখেছে নিজের। চিৎকার করা যাবেনা । ভয়ার্ত চোখে মঈনের দিলে তাকালো। মঈন এতক্ষনে বুঝল কেন শহীদ নীচু করে লুঙ্গী পরে। তাহলে তো বখতিয়ারও —— !!
কিসের যেন শব্দ হচ্ছে। পাথরের ওপর লোহা ঘষলে যেমন শব্দ হয় অনেকটা সেরকম। কেউ কি অস্ত্র ধার দিচ্ছে? মঈন কোনো কথা না বলে জুতো পরতে শুরু করল। যত দ্রুত সম্ভব এই ভুতুড়ে বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে । উত্তেজনায়, ভয়ে ওর হাত পা কাঁপছে । জুতোর ফিতে লাগাতে গিয়ে দেখল ফিতে নেই।
রোজি ফিস ফিস করে বলল, তাড়াতাড়ি করেন ।
” ফিতে খুজে পাচ্ছি না ”
” তাহলে ফিতে ছাড়ায় চলেন ”
মঈনের হাত ধরে টান দিল রোজি। আর এক মুহূর্ত এই বাংলোতে নয়। বাইরে এসে দেখল বখতিয়ার বারান্দায় বসে আছে। সে মেঝে থেকে শুন্যে বসে আছে। সে মানুষ নয় । সে যেন এক লম্বা চওড়া দৈত্য । মঈন কে দেখে সে দাড়ালো, লুঙ্গিতে ওর পা ঢাকলো। ওকে পাশ কাটিয়ে ওরা দুজন এগিয়ে গেল। কয়েক পা এগোতেই মঈন চমকে উঠল । তার শরীর কাঁপছে । কারন সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিলের সেই মেয়ে অনিতা।
চলবে…