বাইশ বছর আগে প্রথমবার অমিত আর তনু’র বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দু’বছরের মাথায় আনির জন্ম হয়েছিল, এর পাঁচবছর পর আয়ানের জন্ম। বিয়ের দশ বছরের মাথায় ওদের ডিভোর্স হয়। এরপর থেকে দু’জনেই একা, কেউই আর অন্য কোথাও গাঁটছড়া বাধেনি।
আজ আনিকা আর আয়ান ওদের বাবা মায়ের দ্বিতীয় বারের মত বিয়ের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ছিল, ওদের সাথে ওদের কিছু আপনজন ও ছিল, আনির দুই খালা, মামা-মামী, কাজিনরা, খালু, নানী আর একজন আলেম। বারো বছর পরে আনি আর আয়ানের বাবা-মায়ের দ্বিতীয়বারের মত বিয়ে হলো।
তনু যখন ক্লাশ সিক্সে বা সেভেনে পড়ে তখন থেকেই অমিত তনুদের বাড়ীতে যাওয়া আসা করে, তনু ’র বড় আপু তাজি আর অমিতের বড়দি অনিমা দুইজন ঘনিস্ট দুই বান্ধবী, একই স্কুলে পড়ে, একই পাড়ায় থাকে। একজন আরেকজনের বাড়ীতে প্রয়োজন অপ্রয়োজেনে যাওয়া আসা করে, খেলা করে, সেই সুবাদে তনু আর অমিত ও খেলায় মেতে ওঠে, অমিত তখন কিশোর বয়স পার করছে, খেলতে খেলতে তারা কিশোর প্রেমে মেতে ওঠে। ব্যপারটা প্রথমে বুঝতে পারে তনু ’র বড় আপু, তারই বা বয়স কত সবে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে, তাজি যখন বুঝতে পারে তখন কি করবে বুঝে উঠতে পারে না, কিন্ত এটা ভাল করে বুঝতে পারে যে, এখনি যদি তনু কে ফেরানো না যায় তাহলে বড় ধরনের একটা কেলেংকারী ঘটে যেতে পারে।
তনু ছিল অসম্ভব মেধাবী আর রূপবতী একটা মেয়ে, আর অমিতের নামটা শুনলেই একটা মায়াবী মুখ ভেসে ওঠে, হ্যঁা অমিত সত্যিই একটা মায়াবী চেহারার ছেলে,তবে গায়ের রং কুচকুচে কালো, আদর করে ওর মা ওকে মাঝে মাঝে কালা বলে ডাকে, অনিমা ও কিছুটা টের পেয়েছিল ওদের বাল্যসুলভ প্রেমের। তাজির মত এতটা সিরিয়াস ছিল না অনিমা।এই নিয়ে দুইবান্ধবীর মধ্যে কখনো কথা হয়নি।
এভাবেই চলছিল,.দুই পরিবারের বড়রা কেউ ওদের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি। এরই মধ্যে অনিমার বিয়ে হয়ে গেলো, বিশাল এক ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ের পর ও কলকাতা চলে গেলো , তাজি একা হয়ে গেলো,অনিমাদের বাড়ীতে তাজি আর যায় না, কিন্তু তনু আর অমিত আগের মতই আছে।
তনু খুব বেশী বাড়ী থেকে বের হয় না,সারাক্ষন পড়াশোনা নিয়েই থাকে, রাতে মা তার পাশে বসে থাকে আর সে পড়ে চলে, পড়াশোনায় এত মনোযোগী যে বাড়ীতে বান্ধবীরা আসলে তাদের সাথে দেখা করে না , মাকে বলে ওদের বলে দাও আমি বাড়ীতে নাই, একটুও সময় নষ্ট করে না, শুধুমাত্র অমিত আসলে একটু কথা বলে, তাজি ওদের কাছেই থাকে, একা ওদেরকে গল্প করতে দেয় না, তাজি নিজেও মাত্র কিশোরী বয়সটা পার করেছে, তাজির ও বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করেছে, বাড়ীর বড় মেয়ে এর পর ওর মেজো বোন আছে, এক এক করে বিয়ে না দিলে ওদের বাবা যে কন্যাদায় গ্রস্ত বাবা হয়ে যাবে, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর তাজির ও বিয়ে হয়ে গেলো, তাজির মেজো বোন রাজিয়া এখন হয়ে গেলো তনু ’র একধরনের গার্জিয়ান, ততোদিনে তনু আর অমিতের বিষয়টা দুই পরিবারের সদস্যরা মানে গুরুজনরা একটু গুরত্ব দিতে শুরু করেছে, তারা তনু ’কে বোঝালো এতদিন তোমরা ছোট ছিলে না বুঝেই অনেক কিছু করেছো,কিন্তু এখন থেকে এগুলো আর চলবে না, অমিতের সাথে কখনই তোমোকে কোন সম্পর্কে জড়াতে দেয়া হবে না, ওর ধর্ম আর আমাদের ধর্ম কখনই এই সম্পর্ক সমাজে মেনে নেবে না, তুমি ঠিকমত পড়াশোনা করো নয়তো তোমার জন্য পাত্র দেখা শুরু করি।
ওদিকে অমিতের বাবা অমিতকে বললো তোমার মত অপদার্থ ছেলেকে আমি আর বাড়ীতে রাখবো না, তুমি যদি তনু ’র কাছ থেকে ফিরে না আসো তাহলে তুমি বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে পারো, আমার কোন সম্পত্তির কিছু তুমি পাবে না।
তনু এরই মধ্যে এইচ এসসি শেষ করেছে বোর্ডের মধ্যে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে, তনু’র মায়ের চোখে আনন্দের জল, তনু এখন উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখে, তনু আর অমিত এখন আগের মত বাড়ীতে বসে গল্প করে না, মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওরা বাইরে দেখা করে, গল্প করে, সময় কাটায়, মাঝে মাঝে রাজিয়ার কাছে ধরা পড়ে, রাজিয়া মা’কে বলে দেয়,সেদিন আর তনু’র পালানোর কোনো পথ থাকে না।
এই বয়সে এসেও মায়ের হাতে কঠিন মার খায়, তনু ’র অসুস্থ বাবা চেয়ে চেয়ে দেখে তার আদরের মেধাবী মেয়েটার অধোঃপতন। তনু ’র মা এবার তনু ’র জন্যে ঘটকের মা্ধ্যমে সত্যিই পাত্র ঠিক করে ফেলে, পাত্র পক্ষ ও তনুকে দেখে পছন্দ করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলে,বিয়ের কেনা কাটার দায়িত্ব পড়ে বড় আপুর উপর।
এরই মধ্যে তনু ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছেলে পক্ষের কাছে তনু ’র মায়ের একটাই দাবী তার মেধাবী মেয়েটার লেথাপড়া যেনো বন্ধ না হয়, পাত্র নিজে রাজী হলে ও পাত্রের মা এই প্রস্তাবে রাজী না, তার একটাই কথা বাড়ীর বড় বউ পড়ালেখা করতে গেলে অন্যদের সেবা করতে পারবে না সুতরাং বিয়ের পর কোন লেখাপড়া চলবে না।
চলবে…