সোলসের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত একটা বাজলো।সবাই খুব মজা করলো।তার আগে বিকেলে আর একটা মজার ঘটনা ঘটে গেল।রাঙা অনেকদিন ধরেই শিল্পিকে পছন্দ করতো।আড়েঠ্যাড়ে অনেকদিন বলতেও চেয়েছে।কিন্তু সাহসে কুলায়নি।আজকে কোথা থেকে এত সাহস পেল কে জানে।দুপুরে লাঞ্চের সময় রাঙা এক তোড়া গোলাপ হাতে নিয়ে সবার সামনে বলে বসল।

-তোদের সবার সামনে আমি একটা কথা বলতে চাই।তোরা বিশজন আমার বন্ধু।আর একজনকে বন্ধু না ভেবে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে ভেবে আসছি।
সবাই সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একটা মুখে এসে থমকে গেল।সে মুখবুজে হাসছে।
-আমি ওকে প্রথম যেদিন দেখি সেদিনই ভালবেসে ফেলি।এতদিন নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছি।আর পারছি না।এমএইচ হলের বাগান থেকে বিশটা গোলাপ চুরি করে এনেছি।যে আমার মন চুরি করেছে সেই চুন্নিকে আমার বিশ বসন্তের বিশটা গোলাপ উপহার দিতে চাই।
এই বলে রাঙা ফুলের তোড়াটা শিল্পিকে এগিয়ে দিল।শিল্পিও স্বাভাবিকভাবে ফুলগুলি গ্রহন করলো।পল্লবরা সবাই হাততালি দিয়ে ওদের নতুন সম্পর্ক বরন করে নিল।
রাজু দাঁড়িয়ে বললো,”এবার আমরা শিল্পিকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি”।
-আমরা চল্লিশ জন বন্ধু একসাথে পড়ি।তোমরা চব্বিশ জন ছেলেবন্ধু আর আমরা ষোলজন মেয়ে বন্ধু।সবসময় ফেভিকলের মত মিশে আছি।আজ রাঙা এর থেকে দুজনকে অশুভ উদ্দেশ্যে আলাদা করতে চাচ্ছে। ওর উদ্দেশ্য সফল হবে না।আমরা সবাই একইভাবে মিলেমিশে থাকবো।রাঙা খুব ভাল ছেলে।আমি ওর চেয়েও ভাল মেয়ে।আমাকে পেতে হলে তোমাদের সবাইকে ওর ট্রিট দিতে হবে।আর মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠানের সময় তোমাদের সাথে একসাথে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দিতে হবে।তোমরা সব বন্ধুরা আমাদের জন্য দোয়া করো।
সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে উঠলো।রাঙা দাড়িয়ে বললো,” শিল্পির আবেদন মঞ্জুর করা হইলো।আগামিকাল ডিনার আমরা হাইওয়ে ইনে করব।”
সবাই হাততালি দিল।তবে প্রথম দিনেই শিল্পির একটা চাওয়া নামঞ্জুর হলো। রাতের মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠানে শিল্পি ও রাঙাকে দেখা গেল না।ওরা তখন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পিছনে নতুন পাঠে ব্যস্ত।
আজকের সকালটা আর পাঁচটা সকালের মতোই।কিন্তু পল্লবের কাছে মনেহলো কি যেন স্পেশাল কিছু ওর জন্য অপেক্ষা করছে।আজ শারমিনের এডমিশন টেষ্টের রেজাল্ট দিবে।আজকে আবার অনেক কাজও ওকে করতে হবে।সকাল সকাল উঠে হাতমুখ ধূয়ে গোসল করে রেডি হয়ে নীচে এলো। এসে দেখে কালাম ভাইয়ের দোকান এখনও খোলেনি।আল বেরুনী হলের পিছনে ইসলামনগরে কালাম ভাই থাকে।হলের দুই ব্লকের দুইটা দোকান।বি ব্লকের দোকান চালায় নুরু মামা আর এ ব্লকের দোকান চালায় কালাম ভাই।জাবি’র সকল কর্মচারী আর ছাত্র-ছাত্রী দের ভিতরে মামা-খালা সম্পর্ক হলেও সবাই কালামকে মামা না বলে ভাই বলে ডাকে।ব্যাপারটা একটা রহস্য।
কালাম ভাই এখনও আসেনি দেখে পল্লব মিলন মামার লণ্ড্রীতে গেল সেই দিনের জামাকাপড় আনতে।মিলন মামা চারটা প্যান্ট আর চারটা শার্ট প্যাকেট করে দিল।চার টাকা মজুরি হলে পল্লব দশ টাকার একটা নোট দিলো।
-সকালে কই ভাংতি পামু মামা।এহনই দোহান খুলছি।
★আমার কাছেতো ভাংতি নাই মামা।
-তাইলে কালামের দোহানে নাস্তা খাইয়া ভাংগাইয়া মোরে দিয়েন।
★আচ্ছা
পল্লব চলে যাচ্ছিল। মিলন মামা পিছন থেকে ডাক দিলো
-হোনেন মামা।
পল্লব পিছন ফিরে তাকালো।
-হেদিন যে জামা দেছেলেন,হের পকেডে এই কাগোজডা পাইছি।মুই রাইখ্যা দিছি।
বলে শারমিনের রোল নম্বর ও ফোন নম্বর লেখা কাগজটা বাড়িয়ে দিল।
পল্লবের ভিতরে তেত্রিশ হাজার কিলো ভোল্টের বিদ্যুৎ শক দিয়ে গেল।বাকরুদ্ধ হয়ে ফ্যালফ্যাল করে মিলন মামার দিকে তাকিয়ে রইলো।গলাটা কেমন জানি শুকিয়ে আসছে।মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে।সামনের বেঞ্চিতে বসে পরলো।মিলন মামা অবাক হয়ে গেল। এক গ্লাস পানি এনে পল্লবকে দিলে ঢোক ঢোক করে সবটা খেয়ে ফেললো।
-মামা আপনি এমন করছেন কেন?
একটু ধাতস্থ হয়ে পল্লব বললো,
★মামা তুমি আমার কি যে উপকার করেছো!পুরা দশ টাকাই তোমাকে গিফট দিলাম।আরও দশ টাকা নাও।
বলে মানিব্যাগ থেকে আরও দশ টাকার একটা নেট মিলন মামাকে দিয়ে রুমের দৌড় দিল।মিলন মামা পল্লবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

চলবে…

About

Kamruzzaman Chunnu

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}