গতকাল সন্ধ্যায় রাজবাটি বাজারে সুন্দরী এক মহিলাকে কামারের দোকানে অর্ডার দেয়া ছুরি নিতে দেখলাম ; সাথে বডিগার্ড হিসেবে আরেক মধ্যবয়সী মহিলাও আছেন ৷ যাহোক, ভদ্রমহিলা অল্পবিস্তর পরিচিত হওয়ায় ছুরি কেনার কারণ জানতে চাইলে উনি সাংসারিক বিবিধ কাজের কথা তুলে ধরলেন ৷ বিষয়টির এখানেই একটি সুন্দর সমাপ্তি ঘটে যাচ্ছিল এবং আমি যথারীতি প্রতিদিনের হাঁটাহাঁটি শুরু করতেই পেছনে চিৎকার চেঁচামেচিতে ফিরে দেখি ওনার হাসবেন্ড ছুরি দিতে বিক্রেতাকে নিষেধ করছেন আর ভদ্রমহিলা সমানে তার স্বামীকে ধাক্কাচ্ছেন – ৷ এতক্ষণে কৌতুহলী জনতা প্রায় চারিদিক ঘিরে ধরে উপভোগ্য দৃশ্যটি উপভোগ করতে লাগলেন- ৷ অনেক শোরগোলের মাঝে এটুকু বুঝা গেল যে, ছুরিটা পারিবারিকভাবে নিরাপদ নয় মোটেই এবং ছুরির ভয়ে বেচারা ভদ্রলোক প্রতিদিন বেশ ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছেন- ৷

নানানজনের নানান কথায় লোকজনের ভিড় জমে গেল- ৷ মুরুব্বী শ্রেণীর দুয়েকজন বিষয়টির সুরাহা করতে আপাততঃ ছুরিটা দোকানদারকেই রেখে দিতে বললেন- ৷ কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া এবং কথা কাটাকাটিতে জানা গেলো উভয়েই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ৷ ভদ্রমহিলাকে জানতাম কিন্তু এটা যে ওনার দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্বামী তা জানতাম না – ৷ আর স্বামীটি স্ত্রী পরিত্যাক্ত একজন ডিড-রাইটার ৷ এনারা উভয়েই কবে যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এটা আমার জানা ছিলো না – ৷ এসব ওনাদের নিতান্তই পারিবারিক ব্যাপার বলে এড়িয়ে যাওয়া যেত কিন্তু কানাকানি শুনলাম ইতিপূর্বে দু’তিনবার এই ভদ্রমহিলা কর্তৃক কর্তন প্রচেষ্টা হয়েছিল এবং অর্ধকর্তিত বেচারা স্বামীটাকে কয়েকবার হাসপাতালেও যেতে হয়েছিলো ৷ প্রতিবেশিদের হস্তক্ষেপে বিষয়গুলো আর যাহোক আদালত পর্যন্ত গড়ায়নি- ৷

আমার নিয়মিত হাঁটাহাঁটি আর হলোই না ৷ কেমন যেন একটা অবসাদ আতঙ্কে শরীর ও মন হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল – ৷ মনে পড়লো আমার বাসাতেও নতুন-পুরনো মিলে বেশ কয়েকটি ছুরি তো আছেই ৷ এরমধ্যে জঙধরা আছে দুটি ৷ বিভৎস একটা ভাবনায় কুঁকড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আমার-৷ পারিবারিক ঝামেলা কার না সংসারে থাকে -! তা বলে কর্তন জাতীয় মানসিকতা -! মাঝেমাঝেই খবরে এসব দূরদূরান্তে ঘটে বলে জানা যায় এবং আমরা তাচ্ছিল্য ভেবে উড়িয়েও দিই ৷ কিন্তু এসব ঘটনা এখন যে পাড়া-পড়শীদের মাঝে এসে গেছে ; আরতো হালকা করে দেখবার সুযোগ নেই – ৷ কী এ্যাক্টা অবস্থা, ভাবা যায়-!

আমরা নিয়মিত কিছু আড্ডাবাজ মানুষ যেমন সাদেকুল ভাই, ইদ্রিস সাহেব, প্রেমহরি বাবু প্রমুখ চায়ের দোকানে বসে এবংবিধ বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনায় ব্যতিব্যস্ত তবে এটুকু পরিষ্কার উপলব্ধি হলো সকলেই পারিবারিকভাবে নিজেদেরকে যথারীতি অনিরাপদ ভাবছেন তাই আলোচনা অন্যান্য দিনের মতো জমজমাট আর হলো না -৷ সাধারণতঃ এসবক্ষেত্রে নিজস্ব সম্বলটুকুর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয় এবং অজান্তেই নিজের কম্পিত হস্তদ্বয় তাকে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠে-৷
তথাপি মানুষ ভালো থাকুক ; দম্পতিরা ভালোবাসার মাঝেই থাকুন এমনই প্রত্যাশা করি – ৷

বাসব রায়

About

Basob Roy

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}