বাইরে চিল্লা চিল্লি শুনে সকালে ঘুম ভাঙলো ফুয়াদের। পাশে তাকিয়ে দেখে স্নেহা নেই৷ চিল্লা চিল্লি শুনে ঘুম ভাঙলে এমনিতেই মানুষের মাথা ঠিক থাকে না৷ তারপর আবার স্নেহাকে নিয়ে ঘরের ভেতরে যা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে৷ ফুয়াদের গা কাঁপছে৷ সে কোনো ভাবে পা বাড়াতে পারছে না৷ কোনো ভাবে উঠে সে দাঁড়ালো৷ চোখে মুখে পানি দিলো৷ সিড়ি দিয়ে নীচে নামতে নামতে সে ভাবছে কি হতে পারে। নীচে নামতেই খাদিজা বুয়ার বিলাপ…

ও স্যার ও স্যার দেইক্ষা জান মেডামের কি অইছে…

আর হাত দেখাচ্ছে লিভিং রুমের দিকে৷

ফুয়াদ লিভিং রুমে ঢুকে তার মাথা খারাপ হয়ে গেলো৷ স্নেহা সাদা শাড়ী পরে বসে কাঁদছে৷ তার দুই হাত থেকে গড় গড় করে রক্ত পড়ছে৷ সারা গায়ে ময়লা। তার এলোমেলো উসকো খুসখো চুলে সব গাছের পাতা আর ময়লা৷ লিভিং রুমের টেবিলের উপর গ্রীস থেকে নিয়ে আসা সে ডেকোরেশন পিস গুলো, যা গতরাতে ফুয়াদ ভেঙে পাউডার করে ফেলেছিলো৷

ফুয়াদ সব বুঝে ফেললো, পাউডার করা জিনিস যা ছিলো ডাস্টবিনে, তা জোড়াও লেগে গেলো, ঠিকমতো ঘরেও চলে এলো৷ এতো কিছু হয়ে গেলো৷ আজ নিশ্চিত অনেক বিপদ আছে৷

ফুয়াদ হন্তদন্ত হয়ে স্নেহার দিকে এগিয়ে গেলো৷

স্নেহা চোখ বড় করে ফুয়াদের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করলো, যেন তার কাছে না যায়৷ ফুয়াদ জিজ্ঞাসা করলোঃ
তোমার কি হয়েছে স্নেহা তোমার হাত থেকে রক্ত পড়ছে৷ হাত কেটেছে কিভাবে?

স্নেহা শুধু গলা গড়গড় করে হুমমমম হুমমম একটা শব্দ করলো, আর চোখ বড় করে ফুয়াদের দিকে রাগি চোখে তাকাচ্ছে৷ তার সমস্ত গা ভিজা৷

এদিকে রুবিনা বলে উঠলোঃ
ও স্যার কাছে যাইয়েন না৷ কাছে যাইয়েন না৷ আমাগো মেডামের ভিত্রে আত্মা হান্দাইছে৷ কাছে গেলে ঠাইট মাইরা ফালাইবো৷

ফুয়াদ খুব ভয় পেয়ে গেলো৷ সে বলে উঠলো, তাহলে এখন আমি কি করবো? তোমরা কিছু বলো৷ এভাবেতো সব রক্ত শেষ হয়ে যাবে৷

খাদিজা বুয়া আর রুবিনাকে বাইরে নিয়ে এসে বললো, চলো সবাই মিলে এক সাথে ধরি৷ কোনো কথা শুনবো না তোমার মেডামের৷

সবাই মিলে স্নেহার কাছে যেতেই, স্নেহার সামনে রাখা একটা কাঁচের টেবিল এক হাতে তুলে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেললো আর বলতে লাগলো, আজ যদি কেউ কাছে আসিস সর্বনাশ করে ফেলবো৷

কিন্তু স্নেহার গলার স্বর একটা ছেলে মানুষের মত৷ সবাই ভয়ে পিছে চলে আসলো৷ ফুয়াদ ভেবে পাচ্ছে না স্নেহার গলায় কি হয়েছে!!!

মূহুর্তের মধ্যে স্নেহা স্নেহার মধ্যে ফিরে এসেছে৷

সে অবাক হয়ে ফুয়াদকে দেখছে মাথা থেকে পা পর্যন্ত, খাদিজা বুয়াকে বলছে,
বুয়া, তুমি রুবিনা এখানে কি করছো? তোমরা সবাই এখানে কি করছো? আমি? হায় আল্লাহ টেবিলটা কে ভেঙেছে?

ওরা কেউ বুঝে উঠতে পারছিলো না কি করা উচিৎ, কি বলা উচিৎ। আবার স্নেহা বলে উঠলো, এখন কটা বাজে? কোন সময় এখন?

ভয়ে ভয়ে ফুয়াদ বললো, এখন সকাল স্নেহা। সকাল আটটা বাজে৷ তুমি কেমন আছো?
এতক্ষনে স্নেহা সব বুঝে ফেলেছে, তার সাথে কি কি হয়েছে৷ সঙ্গে সঙ্গে স্নেহা বলে উঠলো, আমি সরি ফুয়াদ৷ আমি সরি৷

ফুয়াদ এগিয়ে এসে স্নেহার হাত ধরলো৷ সরি বলছো কেন স্নেহা? তার হাত ধরে ফুয়াদ দেখে, পুরো আঠালো ময়লা৷ গা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে৷ পুরো গা ভিজে চুবচুবা৷ মুখে ময়লা লেগে আছে৷ রক্ত আর ময়লা দিয়ে আর সাদা শাড়ী আর সাদা নেই৷ কিন্তু ফুয়াদ বুঝে উঠতে পারছে না ওর কি বলা উচিৎ।

স্নেহা বললোঃ
আমি যাই৷ গোসল করে আসি৷ বলতে বলতে স্নেহা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো৷ সবাই মিলে ধরে স্নেহাকে রুমে নিয়ে আসলো৷

ফুয়াদ বলে উঠলো স্নেহা তোমার হসপিটাল যেতে হবে৷ তোমাকে ভাল ভাবে ড্রেসিং করাতে হবে৷

রুবিনা স্নেহাকে সাওয়ারে নিয়ে গেলো৷ ফুয়াদ খুব ভয় পাচ্ছে৷ আবার কি হয়। আর বসে বসে ভাবছে, স্নেহা যখন অন্য রকম হয়ে যায় তখন তার গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যায়৷ ঘাড় নাড়ায় অন্য ভাবে যেন রোবট৷ জোরে জোরে শ্বাস নেয়ার শব্দ শুনা যায়৷ তারপর কিছু একটা জিনিস ভাঙে৷ তার কয়েক সেকেন্ড পরেই স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ সে সব সময় সাদা শাড়ী পরে তখন আর ভিজে চুবচুবা হয়ে যায়৷

কোনো ভাবে সাওয়ার শেষে বাথরোব পরিয়ে স্নেহাকে বের করে আনলো রুবিনা৷ স্নেহা বলছে, ফুয়াদ আমার ভীষণ মাথা ব্যাথা হচ্ছে৷ সব আঙুল, সব নক কেটে গেছে৷ পিঠেও মনে হয় কেটেছে৷

ফুয়াদ বলে উঠলো, বল কি!!! পিঠে কেটেছে মানে?

স্নেহা বললো, ডাস্টবিনের ভেতরে অনেক কাঁচের টুকরো ছিলো তো৷

রুবিনা বললো পিঠের পেছনে ছোট ছোট কাঁচের টুকরো ঢুকে আছে৷

ফুয়াদের চোখ পড়লো স্নেহার হাতের কনুইয়ের উপর। কনুইয়ের ঠিক উপরে আর্ম্পিডের একটা জায়গা থেকে গর্ত হয়ে মাংস উঠে গেছে৷ সেখানে ময়লা চাপা লেগে একটু একটু রক্ত চুইয়ে চুইয়ে বের হচ্ছে৷ ফুয়াদ স্নেহাকে টেনে বেসিনে নিয়ে সে জায়গায় একটু পানি স্প্রে করে দেয়৷ আর সঙ্গে সঙ্গে ফুলকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু করেছে৷ তাড়াতাড়ি কটন দিয়ে চেপে ধরে বললো, স্নেহা একটা মেক্সি পরে কোনো ভাবে ওড়না পেচিয়ে হাসপাতালে চলো৷ একটা এক্সট্রা কাপড় ব্যাগে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হলো৷ আর ভাবছে ডাক্তার যদি জানতে চায়, তবে কি বলবে৷ হঠাৎ তার মনে পড়লো তার বন্ধু ডাঃ আশফাক চৌধুরীর কথা৷ সে স্কয়ার হসপিটালেই বসে৷ সে রেডিও প্যাথলজি ডিপার্টমেন্টে আছে৷ তাকে কল করে স্কয়ার হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে এসে সব ব্যাবস্থা করতে বললো৷ প্রায় ঘন্টা দুয়েক লাগলো সব ড্রেসিং এবং ট্রিটমেন্ট শেষ হতে৷ হাতের দু জায়গায় স্টিচ লেগেছে৷ টিটেনাস ইনজেকশন ও দিতে হলো৷ মাথায়ও ভীষণ আঘাত লেগেছে৷ ডাক্তার স্নেহাকে জিজ্ঞেস করেছিলো কেমন করে এমন ব্যাথা পেলো৷ স্নেহা বললো সে জানেনা৷ ডাক্তার আশফাককে ফুয়াদ আগেই মেসেজ পাঠিয়ে রিকোয়েস্ট করেছিলো যেন কোন প্রশ্ন না করে কেউ স্নেহাকে৷

এদিকে স্নেহার যে পরিমান ব্লিডিং হলো, তাতে সে প্রচন্ড দূর্বল হয়ে পড়েছে৷ ডাক্তার বললো, এ অবস্থায় স্নেহাকে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন। এবং সে যে পরিমার দূর্বল হয়েছে, তার আরও কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষার প্রয়োজন৷ এমতাবস্থায় স্নেহাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে৷

স্নেহাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো৷ তার নানা রকম পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে৷ সিটি স্কেন করে ধরা পড়লো তার মাথার স্কাল্প ইনজিউর্ড৷ এদিকে ডাক্তার বললো, Sneha is pregnant with twin baby. And she is in very critical conditions.

এসব শুনে ফুয়াদের মাথা খারাপ হয়ে গেলো৷ সে ভেবে কুল পাচ্ছে না কি করবে৷ ফুয়াদের বোন থাকে ঢাকার উয়ারিতে৷ তাড়াতাড়ি বোনকে খবর দিলো৷

এদিকে তার ব্যাবসাহিক কাজে তাকে বিদেশে যেতে হবে এ সপ্তাহে৷ উপায়ান্তর না দেখে বন্ধু ফয়সালকে কল দিয়ে বললো দোস্ত, যে ভাবেই হোক তোর আতর আলীকে আনার ব্যাবস্থা কর৷ আমি আর পারছি না৷

চলবে…

About

Zeenat Alam

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}