রিতা খানম শারমিনকে তার ছেলে সহ নিজে রেডি করছেন। ছেলের কি কি লাগবে, সব ব্যাগে গুছিয়ে দিচ্ছেন। তিনি শারমিন কে বললেন, একটা সুন্দর দেখে শাড়ি নে, বিয়েতে পরবি, আর আরেকটা নে, ওয়ালিমায় পড়ার জন্য।

শারমিন বার বার বলছে, আন্টিমনি, আম্মা বাইরে, এখন আম্মাকে না বলে, ওই বাসায় চলে গেলে, আম্মা রাগ করবেন।
– সংসার তোর না তোর মায়ের?
– এখন, বাচ্চা নিয়ে একা ঝামেলা হয়ে যাবে খালা।
– তুই বড় বউ, তোর বাসায় তোর ননদের বিয়ে, আর তুই যাবি কাল সকালে?
– আম্মা, না করছেন।
– দেখ, সাঈদ ও আজ অফিস থেকে এসে কষ্ট পাবে, তুই চল, তোর কোন অসুবিধা হবেনা।
– আম্মা, কিন্তু রাগ করবেন।
– এই বড়পা কি কখনো তার এই বাসা ছেড়ে কোথাও গিয়ে থেকেছে? আর তুই? চল, আমি গাড়ী দিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসবো, চল। আর বাচ্চা রাখার জন্য মানুষের অভাব হবে নাকি!

রিতা খানম, শারমিন কে নিয়ে তার বাসায় গেলেন, রুমের তালা দেখে রিতা বললেন, কি রে? তোর রুমে কি আছে, মনি মুক্তা?
– সেইফটির একটা ব্যাপার আছে খালা।
– ছোট লোক ছাড়া কেউ ঘরে মানুষ রেখে তালা দিয়ে রুম লক করেনা। যা হয়েছে বাদ দে। ননদের বিয়ে হৈ চৈ কর, বাচ্চা তার দাদীর কাছে দে, দেখবি তিনি কত আনন্দে নিয়ে রাখেন।

হলুদের জন্য ছোট্ট স্টেইজ করা হয়েছে। গাদা ফুলের গহনায় পলি কে খুব সুন্দর লাগছে।

রিতা খানম বললেন কি রে, তোদের স্পিকার নাই? এটা কি বিয়ে বাড়ী নাকি? কোন হৈ চৈ নাই। আনন্দ কর সবাই।

রাহেলা খানম কে রিতা রান্নাঘরে গিয়ে বললেন, বেয়ান, জলির জামাই, তার আত্নীয়, আপনার ভাইয়ের বউ, সবাইকে আমি রাতে নিয়ে যাবো। আপনি চিন্তা মুক্ত থাকেন। আমার উনি, একটু পরে আসবেন, সবাইকে নিয়ে যাবেন দুই বারে।
– না, বেয়ান। এখানে, হয়ে যাবে।
– হবেনা, আমি জানি। আমার অনেক বড় বাসা, সমস্যা নাই। বিপদের জন্য তো আত্নীয়-স্বজন।
– আমার মেয়েরা আপনার খুব ভক্ত! আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ আমি।
– আমরা দুইজন ও মেয়ে দুটিকে খুব পছন্দ করি। কৃতজ্ঞতার কি আছে!

আবিদের বাসা থেকে সামান্য আগে, কন্যার জিনিস পত্র এসেছে।

রিতা খানম খুলে খুলে সবাইকে দেখিয়ে দিচ্ছেন।

বিয়ের শাড়ি টি মেরুন রঙের খুব সুন্দর বেনারসি শাড়ি। সাথে মেরুন রঙের ওড়না! ওয়ালিমার জন্য একটা সোনালী রঙের জরি সুতার কাজ করা কাতান শাড়ি। হলুদের জন্য একটি সুতির শাড়ী, আর আরেকটা শাড়ি এসেছে, সুতির। সাথে আছে দুই জোড়া স্যান্ডেল, কসমেটিক্স, আর সামান্য ওরনামেন্টস।

সবাই বলাবলি করছে, মাত্র চারটি শাড়ি দিয়েছে, ওয়ালিমার শাড়ীটাও তেমন দামী নয়। আর গিফট হিসেবে এসেছে, রাহেলা খানমের জন্য শাড়ি, আর কলির জন্য জামা। আর কোন গিফট আসে নি।

আবিদের মামা এই সব জিনিস নিয়ে এসেছেন, তিনি রিতা খানম কে বললেন, ভাবী আপনি তো আর আমাদের আগের পরিচিত মানুষ, স্বর্ণ আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। স্বর্ণ খুবই সামান্য, কারণ আবিদ নিজের টাকা দিয়ে বিয়ে করছে, দুলাভাই শুধু ওয়ালিমায় খরচ করবেন। শিক্ষক ছেলে, সব বাজার করে, স্বর্ণের জন্য তেমন টাকা রাখতে পারেনি।
– সমস্যা নেই ভাই। যা আছে তা দিন।
– এক টা চেইন আর লকেট, এক জোড়া ঝুমকা, আর ছোট্ট একটা আংটি।
– আলহামদুলিল্লাহ! ছেলে নিজে এতো টুকু করতে পেরেছে, অনেক বেশি।

শারমিন বিরক্ত হয়ে বললেন, কি গো পলি ভাইজানের সাথে রাগ দেখাও শুধু, দেখেছো কি দিল তোমার জামাই? দিবে কেমনে? টাকা থাকলে তো দিবে।

পলি খুব শক্ত হয়ে বলছে, আমি মানুষ কে দেখে বিয়েতে রাজী হয়েছে, টাকা পয়সা দেখে নয় ভাবী।

শারমিন আর কোন কিছু বললেন না।

সাঈদ রাতের বেলা, মায়ের হাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে বললো, এই টাকা তুমি যেকোনো কাজে লাগিয়ে দিও, আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি দেওয়া সম্ভব নয়।
– যা দিয়েছো, অনেক। আর লাগবেনা, দেওয়া। দোয়া কর, বোনের জন্য।

বিয়ের দিন পলিকে মেরুন বেনারসিতে খুন সুন্দর লাগছিল, মায়ের বানানো গহনা গুলিতে খুব চিক চিক করছে নতুন বউকে। এতো গহনা দেখে, ছেলে পক্ষের সবাই খুব প্রশংসা করছে।

আবিদ পড়েছে সোনালী রঙের শেরওয়ানি, তাকেও বেশ সুন্দ লাগছে, মাথার মেরুন পাগড়ীতে বেশি সুন্দর লাগছে। কলি দুলাভাইয়ের সাথে খুব আনন্দ করছে। তিন ভাই আত্নীয়দের খুব যত্ন করছে, যাতে বোনের যেন কোন সম্মান নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখছে।

বিদায়ের সময় কলি বোনের গলা জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেছে, আর বার বার বলছে, আমার আপা ছাড়া আমি কোন দিন থাকিনি, এখন কেমন করে থাকবো রে আপা! কিভাবে থাকবো!

পলি ও বোনের গলায় শক্ত করে জটিয়ে দজরে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।

বিদায়ের পর যেন, চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কলি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। কান্না করতে করতে, বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছে।

রিতা খানম বাসায় এসে বললেন বেয়ান, আগামীকাল তো ওয়ালিমা। এখন মেয়ে কে কি ওয়ালিমা থেকে এই বাসায় নিয়ে আসবেন?

শারমিন সাথে সাথে বললো না, খালা। পলির জামাই, ফিরানীতে বাড়ীতে যাবে। শ্বশুর বাড়ী দেখবেনা? এখানে এসে কি মজা পাবে?
– কি বলিস তুই? এরা এখানে, বাড়ীতে হঠাৎ আয়োজন করবেন কিভাবে?
– দুদিন পরেই যাবে, কিন্তু বাড়ীতে গেলে আনন্দ হবে তাই না মা?

রাহেলা খানম বললেন হ্যা, মা। দেখি কি করি। তিনি, বুঝতে পারছেন, শারমিন তার বাসায় আর কোন ঝামেলা হোক একদম পছন্দ করছেন না। এখন বাড়ীতে গিয়ে আবার নতুন করে কিভাবে কি আয়োজন করবেন, তাই নিয়ে ভাবছেন রাহেলা। এই মুহুর্তে কি নতুন জামাই বাড়ী যেতে রাজী হবে? ইশ কি যে এক ঝামেলায় পড়েছেন তিনি! কি করবেন, বুঝতে পারছেন না….

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
০৯.০১.২০২২

About

Annama Chowdhury

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}