রাহেলা খানমের সিট পড়েছে একদম জানালার পাশে, খ বগির শেষ সিট। তিনি কলিকে শক্ত করে ধরে বসেছেন। আর নাহিদ সামনের সিটে বসে আছে।

কলি মায়ের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন ছোট্ট বাচ্চার মতো আগলে রেখেছেন।

কলি বললো মা, আমাদের খালাকে বসে আসা উচিত ছিল।
– আমি চিঠি লিখে দিব, চিন্তা করিস না।
– মা, খালা-খালুর মতো এতো ভালো মানুষ, আমি খুব কক দেখেছি। তারা খুব কষ্ট পাবেন।
– আমি জানি, কিন্তু! থাক, মা আর কথা বলিস না। আমি তাদের জন্য প্রতি ওয়াক্তে নামায পড়ে, দোয়া করবো। এখন, তোর একটা ভালো বিয়ে দিলেই, আমি শান্তি। ছেলেদের বিয়ে নিয়ে আমার চিন্তা কম।

কলি জানে, গতকাল রাতে, ভাইজানের কথায়, মা ঠিক কত টুকু কষ্ট পেয়েছেন। এজন্য, তিনি কথা বলতে পারছেন না। চুপ করে জানালার দিকে তাকিয়ে আছেন।

বাড়ী আসার পরে, সন্ধ্যার দিকে, রাহেলা খানম জাহিদ কে বললেন বাবা, মাস্টার্স পড়ে, আর কাজ নাই। তুমি কলির জন্য একজন ভালো পাত্র দেখো।
– মাস্টার্স করে ফেললে ভালো মা।
– ভালো তো জানি। পলির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। একা একটা মেয়ে বাড়ীর বাইরে থাকুক, আমার ইচ্ছে নেই।
– হলে কত মেয়ে থাকে।
– থাক। আমি কলিকে আর পড়াতে চাই না। এটাই শেষ কথা। আর আমার মাথা টা ধরে এসেছে, তুই দরজা টা হালকা লাগিয়ে, পাখা টা ছেড়ে দিয়ে যা।
– মা, শরীর খারাপ নাকি?
– না, আমি একটু ঘুমাবো।

জাহিদ রুম থেকে বেড়িয়ে আসার পর, কলি সব ঘটনা খুলে বললো, এবং আরও বললো যে, মেজ ভাই মা একটু একলা থাক, কান্নাকাটি করে, হালকা হবে। কত কষ্ট করে, ভাইজানের পড়াশোনা চালিয়েছে। আর আজ?
– আমি সকালে স্কুলে গিয়ে আরেক সংবাদ শুনলাম, সম্ভবত আমাকে অন্য স্কুলে বদলি করে দিবে। বছর তিনেকের জন্য।
– কোথায়?
– পাশের জেলায়। আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষকের অনেক দিন বদলি হয় না, তাই এল সাথে সবার বদলির অর্ডার আসবে। এখন লাইব্রেরি! বাড়ী কে চালাবে? শাহিদ ও তার চাকরি নিয়েই ব্যস্ত, তাছাড়া ও ব্যবসা বুঝেনা। কি করবো আমি, মাকে কিভাবে বলি, তাই চিন্তা করছি।
– আজ থাক, কাল বলবে। আপাতত নাহিদের সাথে আলাপ কর।

রাতের বেলা একটা কলা খেয়ে, বিছানায় আসলেন রাহেলা। কলি বললো, শুধু কলা খেয়ে ঘুমাবে?
,- হ্যা।
– তুমি তো বল, “খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল” আর এখন তুমি?
– আমার পেট কথা দিয়ে ভর্তি। ভরা পেটেই ফল খাচ্ছি।

কলি আর কথা বাড়ায় নি, থাক।

পলি, আবিদের পুরো পরিবারের সাথে গ্রামে গিয়েছে, শফিউল আলম সাহেবের বাড়ী, অনেক সুন্দর। পুরোনো আমলের দুই তলা মাটির বাড়ী। পলির খুব পছন্দ হয়েছে। শ্যামলা বর্নের দাদী শ্বাশুড়ি কেও বেশ ভালো লাগছে পলির। আবিদের সাথে, গ্রামে এসে তার ভীষন ভালো লাগছে।

ভোর বেলা, ফযরের পরে, জাজিদ মায়ের পাশে বারান্দায় বসে আছে। রাহেলা খানম বললেন, কি রে কিছু বলবি?
– হুম।
– কি?
– আমার বদলি হতে পারে।
– তুই না বললি প্রাইমারী তে বদলি হয়না।
– হয়, তবে, কম। আমার ভাগ্য খারাপ তাই হয়েছে।
– ভালো কিছু আছে, তাই হচ্ছে। এতো চিন্তার কিছু নেই। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন।
– লাইব্রেরি?
– কিছুদিন বন্ধ রাখ, না হয় যেখানে চাকরি সেখানেই নিতে হবে। শাহিদ কে দিয়ে ব্যবসা হবেনা।
– নাহিদ এলটা প্রস্তাব রেখেছিল।
– কি?
– বলেছিল, ওর টিউশনি এখন ভালোই চলছে। তুমি, কলি ঢাকায় চলে যেতে। কলিকে নিয়ে একা গ্রামে থাকা বেশ ঝামেলার।
– বাবা, স্বামীর ভিটা, স্বর্ণের চেয়ে খাটি। আমি এখানেই থাকি। কারো কথা শুনতে চাইনা।
– কলিকে ঢাকায় ভর্তি করে দিতাম।
– কাল রাতেই বললাম, জামাই দেখতে, আর পড়াশোনা লাগবেনা।

কলি মাকে দেখছে, কেমন শক্ত হয়ে আছেন দুই দিন ধরে, চাপা কষ্টে ভিতর ফেটে যাচ্ছে। সে কি।সত্যি আর পড়তে পারবেনা? মায়ের এই কথাই কি শেষ কথা? নাকি তিনি মত পাল্টাবেন, তবে ভিটা ছেড়ে সহজে, চলে যাওয়া, তার কর্ম না। নাহিদ কি সত্যি পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারবে! কত চিন্তায় ভাবছে দিন কলি….

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
১৮.০১.২০২২

About

Annama Chowdhury

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}