জাহিদ দুপুরে খাওয়ার পর থেকে মায়ের খাটেই বসে আছে। রাহেলা বেগম, পান মুখে দিয়েছেন।
রাহেলা বেগম বললেন বাবা রওনা হ, পরে দেরী হয়ে যাবে, যেতে।
– মা, আব্বার যে চাকরি ছিল, তার সাথে যদি তুমি চাকরি করতে, কেমন হতো?
– কিসের মধ্যে, কি প্রশ্ন করিস?
– আচ্ছা বলো।
– ভালো হতো, আর্থিক কষ্ট কম হতো। তবে, চাকরি করলে, তোদের ঠিক মতো যত্ন করতে পারতাম না!
– ভালো হতো, তাইতো?
– তুই ঝেড়ে কাশ দে, কি হয়েছে বল।
– মা, আমি চাইনা আমার বোনেরা এই আর্থিক কষ্ট করুক। তুমি কলিকে নিয়ে ঢাকায় যাও, ও মাস্টার্স করুক।
– ঢাকা যাবো পাগল নাকি?
– শাহিদ তোমাকে না বলে, বাসা নিয়েছে।
– ও কোথায়? ওকে এতো বড় সাহস কে দিয়েছে?
– মা, ওকে জলির বাড়ী ইলিশ মাছ দিয়ে পাঠিয়েছি।
– ঘুষ দিচ্ছিস আমাকে?
– মা, জলি কি আমার বোন না? তুমি মা, রাজী হও। এতো বড় বাড়ীতে তুমি কলিকে নিয়ে থাকো। আমার রাত হলে, চিন্তায় অস্থির লাগে।
– আল্লাহ ভরসা।
– মা, সাবধানে থাকতে হবে। আজ যদি নাহিদ-শাহিদ ঢাকায় বাজে আড্ডায় চলে যায়, তখন? তুমি কাছে থাকলে ওরাও ভালো থাকবে।
– আমার ছেলেরা কেন খারাপ হবে?
জাহিদ তিন ঘন্টা বোঝানোর পর রাহেলা বেগম সম্মতি দিলেন, তিনি ঢাকা যাবেন। তবে, এখন না। আগামী সপ্তাহে, জাহিদ যে নিয়ে তিনি যাবেন।
কলি খবর শুনে খুব খুশি যাক, পড়াশোনা হবে। সবাই ছোট্ট করে হলেও এক সাথে থাকা হবে।
জলি ইলিশ পেয়ে খুবই খুশি, সে নিজে রান্না করে, ভাইকে দুপুরে খাইয়ে দিয়েছে। আসার সময়, নাহিদ কে ছোট্ট চিরকুট দিয়ে দিয়েছে। এবং বলেছে,
সোনাভাই, তুই এটা পড়বিনা, মা কে দিবি।
নাহিদ বাড়ী পৌছে, খবর শুনে খুবই খুশি হলো। রাহেলা বেগম নাহিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি রে আমার শাহজাদা পুত্র, মাকে না জানিয়ে বাসা নিয়ে নিস, এতো বড়ভয়ে গিয়েছিস।
নাহিদ সাথে সাথে বললো, মা জলিপা কি চিঠি দিয়েছে, তোমাকে। খুব নাকি জরুরী।
– কি জন্য চিঠি?
– জরুরি, অনেক। তুমি পড়, আমি আসছি একটু।
রাহেলা বেগম বললেন, কলি তুই চিঠি পড়, আমি চোখ দিয়ে ভালো দেখিনা এখন।
মা,
আমার জন্য দোয়া করবে, বেশি বেশি। তুমি নানি হবে। আমাকে দেখতে আসিও মা।
ইতি,
জলি।
কলি চিৎকার করে উঠে বললো ও মা আমি প্রথম বার খালামনি হবো। আহা, কি মজা হবে। ইশ!
– আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার জলিকে ভালো রেখো। আমি আমার এই মেয়েকে এই অবস্থায় রেখে কেমনে ঢাকা যাই!
নাহিদ সেদিন রাতেই ঢাকা চলে গেল, যাওয়ার সময় বাড়ী থেকে কিছু হাড়ি-পাতিল, বাসন, কলির কাপড় সহ দরকারী কিছু জিনিস নাহিদ নিয়ে গেল।
নাহিদ ঢাকায় গিয়েই, টিউশনির বেতন দিয়ে, জানালার পর্দা কিনলো, একটা সিলিং ফ্যান। রান্নাঘরের জন্য একটা সেলফ।
জাহিদ এক সপ্তাহ পড়ে, এসে মাকে নিয়ে সব রেডি করছে, শাহিদ এসেছে সাহায্য করতে। আগের দিন রাতে জলিকে দেখে এসেছেন রাহেলা। জলির মন খুব খারাপ, তাকে একা রেখে চলে যাচ্ছেন মা।
রাহেলা বেগম বলছেন, আমার এই বাড়ী ছেড়ে আমার যেতে একদম মন মানেনা বাবা। আমি তো তোর বাবার হাত ধরে এসেছিলাম। আজ এই বাড়ী এরকম শূন্য করে চলে যাবো। তোর আব্বা হয়তো কত কষ্ট পাচ্ছেন।
– মা, আমার কি এই বাড়ী ছেড়ে ভালো লাগে? কিন্তু থাকতে হয়। এটাই বাস্তবতা।
– আমি এতো কিছু বুঝিনা বাপ।
রাহেলা বেগম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদে যাচ্ছেন। কেমন করে থাকবেন তিনি এই বাড়ী ছাড়া!
সন্ধ্যার পরে, এক ট্রাকে করে শাহিদ ঢাকার বাড়ীর নিচে এসে নামলো। জাহিদ কলি আর মাকে নিয়ে ট্রেনে করে আসছে।
নাহিদ আরও একজন মিস্ত্রি রেখেছিল জিনিস পত্র উঠাতে। জিনিসপত্র তেমন কিছুই না, একটা খাট, একটা আলনা, তিন টা ট্রাংক আর একটা পড়ার টেবিল। আর কিছু বস্তায় কিছু টুকিটাকি বাসন কোসন।
নাহিদের ভেতর আনন্দে ভরে যাচ্ছে, সে সব কিছু সুন্দর করে সেটিং করছে। যদি জিনিস গুলো পুরনো তারপর ও সুন্দর করে রাখছে সে।
ট্রাক বিদায় দিয়েই, রুম ভালো করে ঝাড়ু দিয়েছে নাহিদ। রান্নাঘরে গিয়ে লেবু দিয়ে শরবত বানাচ্ছে।
শাহিদ বললো কি রে খালি পেটে কি শুধু শরবত দিবি? রান্না করেছিস কিছু?
– রান্নাঘরে আয় দেখ।
শাহিদ দেখলো, নাহিদ অনেক কিছু রান্না করছে। মুরগী ভুনা করেছে, ডাল ভুনা করেছে, করলা ভাজি, ডিম ভুনা, ভাত।
শাহিদ বললো কিরে খাওয়া যাবে?
– তুই টেস্ট করে দেখ। শুধু ভুল ধরা না? অনেক মনোযোগ দিয়ে করেছি।
বাসায় ফ্রিজ নেই, তবুও লেবুর শরবত গ্লাসে ঢেলে ছোট রুমে রেখেছে নাহিদ। তার খুবই আনন্দ লাগছে তার সাথে বেশ উত্তেজনাও লাগছে তার।
সে জাহিদ কে ফোন দিল।
মেজ ভাই কোথায়?
– এয়ারপোর্ট স্টেশন কর্স করেছি, কমলাপুর আসছি।
– আচ্ছা, মুগদা এসেই কল দিবে, আমি চলে আসবো।
– আচ্ছা, আসছি।
নাহিদ ঘর থেকে বেড়িয়ে ছাদের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছে। তার একটাই চিন্তা মায়ের কি এই বাসা পছন্দ হবে? নাকি এই চিপা রুম দেখে তিনি রাগ করবেন? তবে মা আসছেন এটাই সবচেয়ে আনন্দের, তবুও কিঞ্চিত চিন্তা হচ্ছে মা কি ভাববেন তাই নিয়ে….
চলবে…
আন্নামা চৌধুরী।
২৪.০১.২০২২